#উত্থান১০ – Rise of a Thug

চৌরাস্তার মোড়ে পৌঁছানোর আগেই বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু হয়ে গেলো সবাই। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিকে। রাস্তার বাতিগুলি মনে হয় ফিউজ হয়ে আছে। ভালই হল। কেউ দেখতে পাবে না ওদেরকে। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে দেখে সিগারেটগুলি সব ভিজে চুপসে গেছে। বিরক্ত হয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো সেটা পিস্টন।

ঢাকার মুখী একটা বাস যদি পাওয়া যায়, খুব ভাল হয়।

– গাড়ির ব্যবস্থা করুম নাকি, ওস্তাদ ! – নুলা জিজ্ঞেস করে।

– নারে, গাড়ী না। বাসে উঠুম। এত রাইতে বাসে যাওনই ভাল হইবো। পুলিশের চোখ এড়ানো যাইবো।

পিস্টনের সুচতুর বুদ্ধিতে নুলা সব সময় মুগ্ধ হয়। এজন্যই সে তার বন্ধু হয়েও তাকে ওস্তাদ মানে।

গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। গরম এক কাপ চা পেলে ভাল হতো। কিন্তু এতো রাতে পাবে কোথায় ! এদিক ওদিক তাকায়ে খুঁজছিল কিছু খোলা দেখা যায় কিনা ! ঠিক তখুনি বাসটা এলো। লক্কড় মার্কা মুড়ির টিন একটা। উঠে পড়লো ওরা।

কই যাইবেন আপনেরা ? – কন্ডাক্টর জিগায়।

– ঢাকায় যামু।

– বইসা পড়েন তাইলে। ওস্তাদ এট্টূ পিচ্ছাপ কইততে নামসে। আয়া পরবো।

কাউঠা দেখতে পেলো সবার আগে। থ্রি নট থ্রি রাইফেল পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে বাসের পেছনের সিটে বসে ড্রেস পরা দুইজন পুলিশ খোশ গল্পে মেতে আছে।

– ওস্তাদ, পিছের সিটে দুইটা ঠোলা বইসা আছে। – কাউঠা ফিসফিস করে বলে।

চেয়ারম্যানের বাসা থেকে বের হওয়ার পর পিস্টন ওদেরকে জানিয়েছে যে, সে চেয়ারম্যানের কল্লা কেটে নামিয়ে দিয়ে এসেছে। সেইজন্য পুলিশ দেখে একটু ভড়কে গেছে নুলা। পুলিশ দেখে কে না ভড়কায় ! সবাই ডরায়, অপরাধ না করেও। নুলা একটু বেশী ডরায়। অনেক মার খেয়েছে সে পুলিশের লকআপে।

– শুন, ঠোলারা হ্যাগো কামে ব্যস্ত আছে। যদি কুনো কারণে আমগোরে সন্দো কইরা কিছু জিগায়, কইবি রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়া গেছে। এতো রাইতে কুনো মেকানিক পাই নাই। আর যদি হ্যাগো লগে নামতে কয়, তাইলে কিন্তু মাইরা ফালামু দুনোটারে। আর কুনো উপায় নাই। বুঝলি তরা ?

মাথা নাড়ল নুলা আর কাউঠা।

আর যদি ভালয় ভালয় ঢাকায় পৌঁছতে পারি, তয় কার কাছে যাইবা, চিন্তা করসো, শুনি – নুলা জিগায়।

– মন্ত্রী হালার পুতের বাসায় যামু। হালার পুতেরে কমু, তুই আমাগোরে দিয়া খুন খারাবি করাইছস, এহন বাঁচানের বেবস্থা কর। কতা হুনলে বালা। নইলে ঐ হালারেও

– মাইরা ফালামু। তারপর জেলে ঢুকুম। সমিস্যা কি ? কিন্তু পালায়া থাকার পারুম না আমি।

পিস্টনের সিদ্ধান্ত শুনে নুলা আর কাউঠার মুখ হা হয়ে গেলো কিন্তু ওরা আর কিছু বলল না। পিস্টনের সিদ্ধান্তই অগো সিদ্ধান্ত। পিস্টনের জন্য লাগলে জান দিতে পারে ওরা।

*
*
*
টঙ্গিতে এসে বাস থামল। এখানে দেখা যায় দোকানপাট খোলা আছে এখনো। মানুষ দেখা যায়। দুই একজন যাত্রী নামলো। পুলিশ দুইটা উঠে সামনের দরজার দিকে এগিয়ে আসছে। কাছে এসে মুখ ঘুরিয়ে ওদেরকে একনজর তাকিয়ে দেখল। তারপর ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে – এখানে দশ মিনিট খাড়া। চা খায়া আহি। দেখিস, আমাগোরে থুইয়া চইলা যাইস না কইলাম। তর লাইগা চা লয়া আমু।

বলে নেমে গেলো। নামার আগে আরেকবার ওদের দিকে ফিরে তাকালো।

এই রে সেরেছে ! পুলিশ বেটা ওদেরকে দেখে কিছু একটা সন্দেহ করেছে। বার বার তাকাচ্ছিল। এরপর আর একসাথে এক বাসে যাওয়া ঠিক হবে না। ফিসফিস করে কথা বলল পিস্টন নুলার সাথে।

নুলা উঠে দাঁড়ালো। ওর কাছে সব সময় একটা চাকু থাকে লুকানো। সেটা বের করে নিয়ে ড্রাইভারের কাছে গিয়ে চুপিসারে ছুরিটা দেখিয়ে বলে – ঐ, বাস টান দে। কুনো কতা কবি না। কইলে কিন্তুক ভুঁড়ি ফাঁসায়া দিমু।

বয়স্ক অভিজ্ঞ ড্রাইভার নুলার চোখ দেখে বুঝে নিলো – এই লোক ঠাণ্ডা মাথার খুনী। তাই একটা কথা না বলে এক্সেলেটরে পা দাবালো।

নুলা বাইরে তাকিয়ে কোথাও পুলিশগুলিকে দেখতে পেলো না। একবার কেটে পড়তে পারলে ঠোলারা কিছু করতে পারবে না। ওদের কাছে কোন ওয়াকি টকি নাই।
পথে আর কেউ নামলো না। বাস ফার্মগেইটে এসে পৌঁছুলে ওরা নেমে গেলো। কয়টা বেবি ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। নুলা গিয়ে কথা বলে একটা ট্যাক্সি ঠিক করলো। মিন্টু রোডে যাবে। মন্ত্রীর বাসায়।

*
*
*
রাত তিনটা বাজে। তখনো একনাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তা প্রায় জনমানবহীন। কাছে কোথাও দুনিয়া চাঁদের আলোর মত আলোকিত করে ঠাডা পড়লো। এই আওয়াজকে খুব ভয় পায় পিস্টন। কেঁপে উঠলো সে। দেখে নুলা খ্যাঁক করে হেসে দিলো।
ট্যাক্সিতে তিনজন যাঁতাযাঁতি করে বসে প্লাস্টিকের পর্দাটা আটকে নিলো দুইপাশে। হটাৎ নাকে সিগারেটের গন্ধ পেয়ে পিস্টন ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে – ভাই, তোমার কাছে সিগারেট থাকলে একটা দেও।

ড্রাইভার না তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে কেঁচির ছবিওয়ালা সিজর্সের প্যাকেট আর ম্যাচের বাক্সটা পিছন দিকে এগিয়ে দিলো। এতক্ষণে পিস্টনের ঠোঁটে হাসি দেখা দিলো। একটা সিগারেট ধরিয়ে খুব মনের আনন্দে টান দিলো।

রাস্তায় পানি জমে গেছে। তবুও ফাঁকা রাস্তা ধরে ইন্টারকনের সামনে দিয়ে মিন্টু রোডে পৌঁছুতে বেশিক্ষণ লাগলো না।
মন্ত্রীর বাসার গেইটে পুলিশ বক্স আছে, তারা জানে। বাসা থেকে দুরে বিদায় করলো ট্যাক্সিটা। তারপর হেঁটে এসে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকল।

পিস্টন জানে একতলার প্রথম ঘরটায় মন্ত্রীর খাস পিয়নটা ঘুমায়। ওর ঘরের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ল। একটু পর চোখ কচলাতে কচলাতে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো হাশেম। পিস্টনকে সামনে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।

– ভাইজান আপনে এতো রাইতে কইত্থেকা আইলেন ? ঢুকলেন ক্যামতে ! – হাশেম জিগায়।

– কিছু খাওনের ব্যবস্থা করতে পারবি রে ! – উত্তর না দিয়ে পাল্টা জিগায় পিস্টন।

– এহন তো কিচেন বন্ধ। তয় আমার ঘরে মুড়ি আর গুড় আছে।

– দে, খাই।

মুড়ি খেতে খেতে পিস্টন জিজ্ঞেস করে – তর মালিক কুন সুময় নীচে নামে রে !

– সাতটার সুময় আঁটতে বাইর হইব।

-তাইলে আমি এট্টু ঘুমায়া লই। উনি নামলে আমারে জাগায়া দিস, বুজছস !

বলে হাশেমের বিছানায় গাদাগাদি করে তিনজন শুয়ে পড়লো।

নীচে নামলে হাশেম এগিয়ে গিয়ে কানে কানে খবরটা জানালো। ভ্রু কুঁচকে মন্ত্রী হাশেমের ঘরের দিকে গেলো। পিস্টনের দিকে তাকায়ে বলে – কি খবর মিয়ারা, তুমরা কুন সময় আইলা আমার বাইতে ! টেরও পাইলাম না।

পিস্টন উঠে দাঁড়িয়ে বলে – দেয়াল টপকায়ে ঢুকসি। তাই খবর পান নাই আর কি !

তারপর বলে – আপনের লগে কতা আছে। হাঁইটা আইবেন নাকি এহনি কমু।

-আইচ্ছা, আইজ আর হাঁটুম না। এক কাম করো। হাঁট মুখ ধুইয়া আহো। একলগে নাস্তা খামু। – বলে হাশেমের দিকে ইশারা করে তিনি আবার উপরতলায় উঠে গেলেন।

নাস্তা সাজিয়ে ওদের ডাকতে এলো হাশেম।

দোতলায় মন্ত্রীর ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো সবাই। গরম পরোটার গন্ধ আর ডিমের বড় অমলেট, পোচ দেখে তর সইল না ওদের। ঝাঁপিয়ে পড়ল খাবারের উপর।
একটা ডিম পোচ দিয়ে পেঁচিয়ে এক টুকরা পাউরুটি মুখের ভিতর চালান করে দিয়ে মন্ত্রী জিগায় – তোমারে ত পুলিশ হন্যে হইয়া খুজতাছে। আমি ঠেকায়া রাকছি। নতুন কইরা আবার কুনহানে কি ঘটাইলা। কও ।

– যা করনের আপনের হুকুমে করসি। আপনে মা বাপ। আমি আর পলায়া থাকতে পারুম না। যা করনের করেন। আপনেরে আগেই কইয়া রাখি, আমি কিন্তু আফলাতুন চেয়ারম্যানের কল্লা নামায়া দিয়া আইছি। বলে পিস্টন দম নিলো।

শুনে মন্ত্রী গম্ভীর হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বলে – আপাতত এখানেই থাকো। হাশেম তোমাগো ঘর দেখায়া দিবো। খাওন দাওন পাঠায়া দিবো। দিনের বেলায় লোকজনের সামনে বাইর হইয়ো না আর কি । আমি খোঁজ নিয়া দেখি অবস্থাটা কেমন।

মন্ত্রীর বাসার পেছনে স্টাফ কোয়ার্টার খালি পড়ে আছে। সেখানে তাদের ঠাই হল। কার্টুন ভর্তি ফাইভ ফিফটি ফাইভ সিগারেট এলো। বিয়ারের কেইস এলো। কেরুর জিন এলো। একটা টু ইন ওয়ান ও এনে দিলো হাশেম।

সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমায়। রাত হলে ওদের ফুর্তি শুরু হয়। মাঝে মাঝে মন্ত্রী এসে যোগ দেয়। এক দুই পেগ খেয়ে উঠে যায় আবার।

দুইদিন না যেতেই হাঁপিয়ে উঠলো বন্দী জীবনে। বাইরে যেতে ইচ্ছা করলো। অনেকগুলি মার্ডারের আসামী সে। একবার ধরলে আর ছাড়া পাবে না। তবুও ভয় করছে না। রাতের বেলায় দেয়াল টপকে বেরিয়ে এলো রাস্তায় তিনজন। হেঁটে গ্রিন বারে এলো। অনেকের সাথে দেখা হল। সবাই জানতে চাইলো এতদিন কই ছিল ওরা। কিন্তু কেউ বলল না যে তাদেরকে পুলিশ খুঁজছে।

গ্রিন থেকে বের হয়ে বস্তিতে এলো। বুড়িমা’র কাছে আসল খবর থাকে। বুড়িমা ওদের দেখে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল অনেকক্ষণ। তারপর বলে, পুলিশ এসে খুঁজে গেছে বস্তিতে। নীলক্ষেতের ওসি বদলি হয়ে নতুন লোক এসেছে। এইটা বেশী হারামি টাইপের।

সেসব নিয়ে ভাবছে না পিস্টন। তার মাথায় ঘুরছে কেমন করে একটু কুন্তির সাথে দেখা করা যায়। প্ল্যান করে ফেলল, কাল সকালেই সে ক্যাম্পাসে যাবে কুন্তির সাথে দেখা করতে। যা হয় হবে। তাকে বাঁচানোর ঠেকা মন্ত্রীর। কিছু হলে সে’ই দেখবে।

ঠিক করলো রাতে বস্তিতে কাটাবে। নুলা আর কাউঠাকে পাহারায় রেখে সে বুড়িমার ঘরে ঘুমোতে গেলো। শুয়ে শুয়ে আকাশ কুসুম ভাবছে। এতদিন কোথায় ছিল, কুন্তি এমন জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দেবে ! ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।

সকালে উঠে গোসল করে পরিষ্কার জামা প্যান্ট পড়ে ক্যাফেটারিয়ায় এলো নাস্তা খেতে। শুকুর তাকে দেখে চেয়ার ঝেড়ে পরিষ্কার করে দিলো কাঁধের গামছা দিয়ে। তারপর ডাবল ডিমের অমলেট পরোটা আর লাবড়া এনে দিলো খেতে। পিস্টনের প্রিয় নাস্তা এগুলি। খেয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে আশেপাশের সবাইকে দেখে নিলো এক পলক। না কেউ তাকে খেয়াল করছে না।

বাইরে বেরিয়ে সিগারেট ধরিয়ে একটা টান দিতেই দেখে অনেকগুলি কুকুর তার পাশে ঘুরঘুর করছে। অনেকদিন পর তাকে দেখে খুশীতে লেজ নাড়ছে। মুখ দিয়ে কুই কুই আওয়াজ করছে। দেখে ওর মনটা একদম ভাল হয়ে গেলো। সে ইয়াসিন ভাই’র দোকান থেকে অনেকগুলি বাটার বন কিনে এনে ওদেরকে খেতে দিলো। খুশীতে লাফিয়ে পড়ে খাওয়া শুরু করলো রুটিগুলি।

এই দৃশ্যটা পিস্টনের খুব ভাল লাগে। সে জানে এই কুকুরগুলি অনেক মানুষের চেয়ে ভাল। এবং বিশ্বাসী। মনে তার অনেক বড় পরিকল্পনা আছে। সেটা হল, কোনদিন তার অনেক পয়সা হলে সে রাস্তাঘাটের কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য আলাদা একটা হোটেল খুলবে। নিয়ম করে তিনবেলা ওদেরকে খাওয়াবে। ডাক্তার দিয়ে ওদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবে।

*
*
*
আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে সে ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা শুরু করলো।

নিপা বিল্ডিং পার হয়ে কলা ভবনের দিকে হাঁটছে। পেছনটা শিরশির করছে। মনে হল কেউ যেন তাকে অনুসরণ করছে। পেছন ফিরে তাকাতেই লোকটাকে দেখল। তাকে দেখে হাঁটা বন্ধ করে ঝট করে অন্যদিকে তাকালো। পিস্টন পুলিশের টিকটিকি খুব ভাল করে চেনে। এই মুহূর্তে সে একা । সাথে কেউ নাই । বুঝল ভুল করে ফেলেছে। কলা ভবনের কাছে পৌঁছে সে হটাৎ দৌড় দিলো। পেছনের লোকটাও দৌড়াচ্ছে। এক হাতে ওয়াকিটকিতে কথা বলছে। আরেক হাতে বেরিয়ে এসেছে একটা পিস্তল।

পিস্টন দৌড়ের গতি বাড়ালো। অপারাজেয়ো বাংলা পার হয়ে মেইন গেইটের কাছে পৌঁছে গেলো। দেখল কুন্তি কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ ঝুলিয়ে হেঁটে আসছে উল্টা দিক থেকে।
পিস্টন দৌড়ে আসছে দেখে কুন্তি হাত তুলে তাকে থামালো। তার হাত চেপে ধরে কলা ভবনের সিঁড়িতে পা রাখলো। তখুনি ঠাস করে গুলির আওয়াজটা শুনলো। পিস্টন তার জিনস প্যান্টটার পেছন দিকে উরুতে হ্যাঁচকা টান অনুভব করলো। কেমন যেন অসাড় লাগছে। হাত দিয়ে দেখে রক্ত। কুন্তিকে জড়িয়ে ধরে সে সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়লো।
কুন্তির চিৎকারে চারিদিক থেকে ছাত্ররা ছুটে এলো। ঘিরে ধরল ওদেরকে। সে শুধু হাত তুলে গুলির উৎস দেখালো। সেদিকে তাকিয়ে কয়েকজন ছুটল ‘ধর ধর’ আওয়াজ তুলে। অবস্থা বেগতিক দেখে সাদা পোশাকের পুলিশটা দৌড়ে পালালো।

এক ছাত্র তার গাড়ি নিয়ে এলো গেইটের কাছে। ধরাধরি করে তাকে গাড়িতে তুলে গাড়ি ছুটল মেডিকেলের দিকে। কুন্তি পিস্টনের মাথাটা কোলে নিয়ে বসে আছে। সেই সুখে ঠোঁটের কোনায় হাসির রেখা উঠে মিলিয়ে গেলো। সে জ্ঞান হারালো।

বাতাসের বেগে খবর ছড়িয়ে পড়লো ক্যাম্পাসে। বহিরাগত কেউ ক্যাম্পাসের ছাত্রের উপর গুলি চালিয়েছে। ( পরিচিতরা সবাই জানে পিস্টন ছাত্র। কুন্তিও তাই জানে )।
খবরটা জেনে নুলা গেলো মন্ত্রীকে জানাতে। কাউঠা গেলো পিস্টনের পাশে। সাথে আরও চারজন। প্রত্যেকের কোমরে লোডেড মাল। পুলিশী ঝামেলা দেখলে গোলাগুলি করে হলেও পিস্টনকে নিয়ে পালাতে হবে। কোনভাবে তাকে ধরা পড়তে দেয়া যাবে না।

বুদ্ধি করে কাউঠা পিস্টনের বিপদের কথা কুন্তিকে জানালো কানে কানে। পুলিস ওকে এরেস্ট করতে পারে সেটাও জানালো। কাউঠাকে রেখে কুন্তি উঠে গেলো একটা ফোন করতে।

সে ফোন করলো তার বড় চাচাকে। তিনি ঢাকার পুলিস কমিশনার। তাঁকে শুধু অনুরোধ করলো, পুলিস যেন পিস্টনকে কোন কারণে এখন এরেস্ট না করে। সে ক্যাম্পাসে আততায়ীর গুলিতে আহত হয়েছে। সে তার বন্ধু।

সুস্থ হলে সে নিজেই পিস্টনকে সাথে নিয়ে চাচার সাথে দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিলো।

তারপর থেকে আশেপাশে আর কোন পুলিস দেখা গেলো না। কুন্তির আন্তরিক সেবায় পিস্টন সুস্থ হতে শুরু করলো হাসপাতালের কেবিনে।
ঘুমের ওষুধের প্রভাব কেটে গেলে চোখ মেলে তাকাল পিস্টন।

তাকিয়ে কুন্তির চিন্তিত মুখটা দেখে তার মন ভাল হয়ে গেলো। সব ব্যথা উবে গেলো। সে উঠে বসতে গেলো। কুন্তি তাঁকে ধরে জোর করে শুইয়ে দিলো। তারপর চামচে করে স্যুপ খাইয়ে দিতে শুরু করলো যত্ন করে।

পিস্টন মনে মনে শুধু ভাবল, জীবন আসলে অনেক সুন্দর। অনেক।