#উত্থান৯ – Rise of a Thug

জীপ ছুটছে তুমুল গতিতে। নিশি রাত। রাস্তায় গাড়ি নাই তেমন। নুলা ড্রাইভ করছে। কাউঠা পাশের সিটে বসেছে। নুলাকে ড্রাইভ করতে দিয়ে পিস্টন পিছনের সিটে কাত হয়ে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে। ভাবছে। ভাবছে কি করে উদ্ধার পাওয়া যায় ! মাথাটা এখনো ঝিমঝিম করছে বেকায়দায় আঘাত পেয়ে। জামা কাপড়ে রক্তের ছোপ। বড় বিপদের মধ্যে আছে সে এই মুহূর্তে।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কালীগঞ্জের সীমানা পার হয়ে যেতে হবে। ধরা ছোঁয়ার বাইরে। হামদুর লোকেরা ধরলে বিপদ হতে পারে। পুলিস ধরলে বড় বিপদ। তাজা খুনের মামলা,তার সাথে পুরনো খুনের মামলা তো আছেই। একদম চৌদ্দ শিকের ওপারে পাঠিয়ে দেবে পারমানেন্টলি।

কুকুরগুলিকে নিজের খাবার খাইয়ে রাতে তার কিছু খাওয়া হয় নাই। খিদায় পেট চোঁ চোঁ করতেছে। কিছু খাওয়া দরকার। নুলাকে ইশারা করলো খাবারের হোটেল দেখলে থামতে।

এতরাতে কি আর কিছু খোলা পাওয়া যায় নাকি ! জয়দেবপুর মোড়ে পৌঁছে দেখে সব দোকানের ঝাঁপ নামানো। সার বেঁধে রিক্সা আর ভ্যান গাড়িগুলি দাঁড়িয়ে আছে জনমানব শূন্য।

হটাৎ ঝিলিক দিয়ে মনে এলো নামটা। আফলাতুন চেয়ারম্যান। মানুষটা রক্তচোষা হলেও তার ভিতর পিস্টনের জন্য মায়া আছে। পিস্টন একবার চেয়ারম্যানের বাস আটকে ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে ফেলেছিল। টাকা দাবী করে ড্রাইভারকে তার মালিকের কাছে পাঠালে মালিক তাকে নীলক্ষেতে আসতে বলেছিল।

আবুল হোটেলে দেখা করতে গেলে বাসের মালিক নিজের পরিচয় দিয়েছিল – আমার নাম আফলাতুন মিয়া। আমি জয়দেবপুরের চেয়ারম্যান। জানি, এইটা আপনের এলাকা। আপনে চান্দা নেন। চাইলে দিমু। অসুবিধা নাই। আবার আমরা একজন আরেকজনের কামেও লাগতে পারি। সেই সম্পর্ক গড়লে টেকার অভাব হইবো না। এইটাও ভাইবা দেখন যায়।

পিস্টন তার কথা শুনছে। মতলব বুঝতে পারছে না। কোমরে রিভলভারটা বেকায়দায় রেখেছে। এই নতুন প্যান্টটা বেশী টাইট। তাই বার বার হাত দিয়ে মালটা এদিক ওদিক সরিয়ে আরাম খুঁজছিল। চেয়ারম্যান সেটা খেয়াল করে বলে- আমারে মালের ভয় দেখায়া লাভ নাই। মরতে আমি ডরাই না।

– না না, আপনে ভুল বুঝতাছেন। নতুন প্যান্ট পইরা বেশী টাইট লাগতাছে। রেডিমেইড এগিনি পইরা আরাম পাই না আমি। আইচ্ছা এট্টু খারান। – বলে উঠে গেলো।

বাইরে গিয়ে নুলার হাতে মালটা ধরিয়ে দিয়ে ফিরে এলো। আড়চোখে খেয়াল করলো হোটেলের ভিতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে চেয়ারম্যানের অন্তত চারজন বডিগার্ড আছে কোমরে মালসহ। সবগুলির মুখে গলায় কাটাকুটির দাগ। মানে খুন করে, চুরির পোঁচ খেয়ে এরা অভ্যস্থ।

ফিরে এসে চেয়ারম্যানের উল্টাদিকে বসে পড়লো।

তারপর বলে – চেয়ারম্যান সাব,কি খাবেন বলেন, দুধ চা নাকি লেবু চা।

মাথা নেড়ে উত্তর দিলো – কিছুই না। আমি বাইরে খাই না কিছু।

তারপর কিছু ভাবার সুযোগ না দিয়ে বলে উঠে – পিস্টন, আপনি আমার কিছু কাজ করে দেন ঢাকায়। ভাল ইনাম পাবেন। ভাল সম্পর্ক হবে। সবাই সবার কাজে লাগব।

– কি কাজ !

– ঢাকায় আমার পনেরটা বাস চলে। এগুলি কেউ কোথাও আটকাইলে, কোন সমস্যা হইলে আপনি সেইটার দেখ ভাল করবেন। ফয়সালা করবেন আপনের মত। তার বিনিময়ে আমি মাসে একটা থোক পয়সা দিবো আপনাকে।

পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা পাঁচশ টাকার বান্ডিল বের করে পিস্টনের সামনে রেখে দিলো – এইটা আপনার এডভান্স। জয়দেবপুরে এলে আমার মেহমান হবেন। খোদা হাফেজ। বলে উঠে বেরিয়ে গেলো আফলাতুন চেয়ারম্যান।

সেদিন থেকে পিস্টন চেয়ারম্যানের হয়ে কাজ করেছে। তার বাসগুলিকে অনেক পাতি মাস্তানের চাঁদাবাজি থেকে বাঁচিয়েছে। মাসে মাসে টাকা পাচ্ছে। কিন্তু কখনো জয়দেবপুরে চেয়ারম্যানের এলাকায় যায় নাই। এই মুহূর্তে তার আফলাতুন চেয়ারম্যানের কথা মনে পড়লো। এটা তার এলাকা। তার কাছেই যাওয়া যাক। ভেবে খুশী হয়ে গেলো।
*
*
*
বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ চমকাল। ‘কড়াৎ’ শব্দে বাজ পড়লো কাছে কোথাও। সেই শব্দে কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে। চৌরাস্তার মোড়ে পৌঁছে নুলাকে ডানে যেতে বলল।

নুলা অবাক হয়ে বলে – ওস্তাদ, ঢাকার রাস্তা তো সোজা। ডাইনে যামু ক্যান !

– আফলাতুন চেয়ারম্যানের বাসায় যামু। পিস্টন বলে।

তখুনি চোখে পড়লো পুলিশের গাড়ীটা। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে পিকআপ ভ্যানটা। পাশে রেইনকোট পরা রাইফেল কাঁধে নিয়ে দাঁড়ানো কয়জন পুলিশ। পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো। হুইসেল বাজিয়ে হাত তুলল একজন পুলিশ।

– কি করুম ওস্তাদ, তাড়াতাড়ি কন। টান দিমু নাকি থামুম ?

পুলিশের গাড়ি আর একশো গজ দুরে। ইচ্ছা করলে ওদের বুড়ো আঙ্গুল দেখানো যায়। কিন্তু দেখিয়ে যাবে কোথায় ! তাদের তো এই এলাকায় থাকার ইচ্ছা। চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাবে। তাইলে গাড়ি থামানোই ভাল হবে।

– নুলা গাড়ি থামা। পিস্টন হুকুম দিলো।

গাড়ির দুপাশে দুজন পুলিশ এসে দাঁড়ালো। বাকি দুইজন একশো গজ দুরে দাঁড়িয়ে কাঁধ থেকে রাইফেল নামিয়ে হাতে নিলো।

নুলার পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো – এত রাতে কোথা থেকে আসতেছেন আপনারা ? এদিকে কি কাজ ?

– চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে যামু।

– সাথে কোন বেআইনি মাল কিংবা অস্ত্র আছে ?

– স্যার, এইসব কি কন ! অস্ত্র থাকবো ক্যান ? আমরা তো চোর ডাকাইত না।

ভেতরে উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করে – গাড়িতে কে কে আছে ? সবার কাগজপত্র আর গাড়ির কাগজ দেখান। তারপর গাড়ী ছেড়ে নেমে আসেন। সার্চ করুম।
তাদের কাছে অন্যের গাড়ীর কাগজ থাকবে কি করে ! নিজেদের কাগজ তো নাইই।

– কাগজপত্র থাকবো কি করে ? সব তো চেয়ারম্যান সাবের কাছে। এইটা ওনার গাড়ী।

চেয়ারম্যানের গাড়ী শুনে থমকে গেলো পুলিশেরা। ‘অপেক্ষা করেন’ বলে একজন ভ্যানের দিকে দিকে এগিয়ে গেলো । গাড়ির জানালার কাছে গিয়ে বলছে – স্যার, গাড়ীতে তিনজন আছে। কাগজপত্র নাই। ওরা নাকি চেয়ারম্যান সাবের লোক। ছাইরা দিমু ?

– চেয়ারম্যান সাবের মানুষ হলে আটকানো ঠিক হবে না। ছেড়ে দাও। তবে ছাড়ার আগে সবাইকে নামিয়ে গাড়িটা চেক করে দেখো ভাল করে।

– সবাই নামেন। গাড়ি চেক করতে হবে।

একে একে নামলো নুলা, কাউঠা, পিস্টন – সবাই।

পুলিশের একজন টর্চ লাইট জ্বেলে গাড়ির ভেতরটা দেখছে। পেছনের সিটে রক্ত লেগে আছে। দেখে ভড়কে গেলো। ঝট করে বেরিয়ে সবার উপর টর্চের আলো ফেলে দেখতে শুরু করলো। পিস্টনের উপর গিয়ে আলোটা স্থির হল। তার গায়ের জামা কাপড়ে অনেক রক্ত লেগে আছে।
সাথে সাথে পাশের পুলিশটা রাইফেল তাক করে ফেললো।

– সত্যি করে বলেন, কোথায় কারে খুন কইরা পালাইতাছেন আপনেরা !

এতক্ষণে পুলিশের পিক আপ ভ্যান থেকে নামলো অফিসারটা। দশাসই শরীরে বিশাল পেট নিয়ে এগিয়ে এলো জিপের দিকে। কোমরে রিভলভার ঝুলানো।

কাছে এসে তীক্ষ্ণ চোখে সবাইকে এক নজর দেখল। পিস্টনের দিকে তার দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে।

বলে – আপনাকে খুব চেনা মনে হচ্ছে। কোথায় দেখেছি বলেন তো !

পিস্টনও তাকে চিনল। নীলক্ষেত ফাঁড়িতে দেখেছে। ওসি সাহেবের প্রিয় পাত্র ছিল।

তাই আর ভণিতা না করে বলে দিলো – আমার নাম পিস্টন। আমাকে নীলক্ষেতের ওসি সাহেবের রুমে দেখেছেন।

– এইবার চিনেছি। আছেন কেমন ? এইদিকে কি কাজ ? গায়ে রক্ত কেন রে ভাই ! খুন টুন করেন নাইতো ?

– না না, ওসব কিছু না। রাস্তায় হিসু করতে নামলে একটা পাগলা কুকুর ধরেছিল আমাকে। ভয়ের চোটে কুকুরটার ভুঁড়ি ফাঁসিয়ে দিয়েছি। তারই রক্ত লেগে গেছে জামা কাপড়ে।

তারপর যোগ করে- চেয়ারম্যানের একটা জরুরী কাজে গেছিলাম গাজীপুরে। উনি অপেক্ষা করতেছেন। এবার যাই আমরা ?

অফিসার একটু ইতস্তত করে পর মুহূর্তে ভাবল চেয়ারম্যানের কাজে বাধা দিলে নির্ঘাত ট্রান্সফার করিয়ে দিবে বান্দরবনে। তাই আর ওদের দেরী করাতে সাহস হল না। বলে – ঠিক আছে আপনারা যান। চেয়ারম্যান সাহেবকে আমার সালাম বলবেন।

শুনে ঝপাঝপ গাড়িতে উঠে পড়লো তিনজন। গাড়ি ছেড়ে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সবাই।

চেয়ারম্যানের বাড়ির বিশাল ফটকের সামনে এসে হর্ন দিলো। রাত প্রায় ভোর হয়ে এলো। কেউ শুনল না। আবার হর্ন দিলো। এবার ভেতরে একটা বাতি জ্বলে উঠলো। চোখ কচলাতে কচলাতে একজন বেরিয়ে এলো। দারওয়ান হবে। গেইটের বাইরে জিপ গাড়ি দাঁড়ানো দেখে ঘুম কেটে গেছে তার।

এগিয়ে এসে বলে – কারে চান আপনারা ?

– চেয়ারম্যানের সাবের কাছে এসেছি। ওনাকে খবর দেন। বলেন পিস্টন এসেছে।

দারওয়ান গেইট না খুলে ভেতরে গেলো। মিনিট পাঁচেক পরে ফিরে এলো। গেইটে খুলে দিলো। ওদের গাড়ি ঢুকতেই গেইট লাগিয়ে এসে ওদেরকে বসার ঘরে এনে বসালো।

– একটু বসেন। চেয়ারম্যান সাব ফজর পড়ে আপ্নেগো লগে দেখা করবো।

নরম সোফায় বসতেই চোখে যেন রাজ্যের ঘুম নেমে এলো। মিনিট পনেরো পর সফেদ পাঞ্জাবী পরা চেয়ারম্যান সাহেব এসে বসার ঘরে ঢুকল।

এসেই বলে – কি মিয়ারা কেমন আছো ? হটাৎ আমার বাড়িতে আইলা কি মনে কইরা ?

পিস্টনের গায়ের জামায় রক্ত দেখে চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে রইলো। পিস্টন নিজেই ঘটনা খুলে বলল।

থুতনিতে হাত রেখে কিছুক্ষণ ভাবল আফলাতুন মিয়া। তারপর বলে – আচ্ছা পরে কথা বলবো। এখন যাও গোসল সেরে কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। দারওয়ান তোমাদের ঘর দেখিয়ে দেবে। বলে উঠে গেলো।

পরদিন বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙ্গল সবার। বাইরে তাকিয়ে দেখে উঠানে ওদের জিপটা নাই। দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

নাস্তার টেবিলে বসে আবার দেখা মিলল চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে। তিনি জানালো – চিন্তার কোন কারণ নাই। হামদুর সাথে কথা হয়েছে তার। খুন হওয়া লোকটা হামদুর মানুষ না। পুলিশি ঝামেলা সে মেটাবে। হামদুর জীপ চেয়ারম্যান সাহেব ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।

তারপর পিস্টনকে অবাক করে দিয়ে বলে – আর কতদিন এসব খুন খারাবির কাম নিজের হাতে করবা, মিয়া ? এবার অন্য কিছু ভাবো। রাজনীতিতে আইসা পড়।

– বলেন কি চেয়সারন্যান সাব। আমার তো কুনো লেহাপরা নাই। রাজনীতি করুম কি দিয়া ?

– লেহাপরা কাকুন হালার আছে সেইটা কউ তো হুনি। লেহাপরার কাগজপাতি আমি বানায়া দিমু। তুমি চিন্তা ভাবনা করো।

– তার আগে অবশ্য তোমার আরো কয়টা কাম করতে হইবো। আইজ রাইতে এখানে একটা অপারেশন কইরা ঢাকায় চইলা যাইবা। ওইদিকে সব কিলিয়ার আছে। খবর নিছি। মন্ত্রী সাবে তোমারে ঢাকায় ফিরতে কইছে।

– কাজটা কি চেয়ারম্যান সাব ?

– জানো তো কিছুদিন পর আমার নির্বাচন। আমার প্রতিপক্ষ খুব শক্ত। অনেক বুঝাইলাম সইরা দাঁড়াইতে। কথা হূণে না। এখন তোমারে যেইটা করতে হইবো – অর একটা পোলা আছে, হাইস্কুলে পড়ে। পোলাটারে উঠাইয়া আইনা মাইরা পুকুরে ভাসায়া দিতে হইবো। তাইলেই সে দুর্বল হয়া মাঠ ছাইরা পলাইব। আর কুনো কায়দা নাই।

এই কথা শুনে পিস্টনের পাষাণ হৃদয় পর্যন্ত কেঁপে উঠলো। সে অনেক খুন করেছে ঠিক । কিন্তু তার নীতি হল, নারী এবং শিশুর গায়ে সে স্পর্শ করে না।

তাই একদম কিছু না ভেবে সটান বলে দিলো – এই কাজ আমাকে দিয়ে হবে না চেয়ারম্যান সাহেব। আমারে মাফ করেন।

– মাফ করনের উপায় নাই তো। এইটা আমার হুকুম না। উপরের হুকুম, মিয়া। আমারে জিততেই হইবো। প্রেসিডেন্টের হুকুম। ফালাই কেমনে, কও ।

– আপনের কি কাম করনের মানুষের অভাব হইলো, চেয়ারম্যান সাব ! আমারে এগিনি করতে কন ক্যান ?

– এইটাই তোমার শেষ কাম। বিশ্বাস না হইলে তুমি মন্ত্রী সাবের কাছ থেইকা হুইনো। ওনার ঘুম ভাঙ্গলে লাইন লাগাইয়া দিমুনে।

কেউ টের পেলো না। নীরবে তার মাথায় রক্ত চড়ে গেলো।

ঠিক সেই মুহূর্তে পিস্টন সিদ্ধান্ত নিলো – নিজের হাতে এই চেয়ারম্যানের গলা কেটে ফেলবে সে। এবং আজ রাতেই। তারপর তার যা হওয়ার হবে।

সে কিছু না বলে উঠে বাইরে এলো। একটা সিগারেট ধরিয়ে পায়চারী করতে লাগলো। মাথার ভিতর ঝড়ের গতিতে খুনের প্ল্যান ঘুরতে শুরু করলো। সিদ্ধান্ত নিলো শেষ মুহূর্তের আগে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী নুলাকেও জানাবে না কিছু। কিন্তু আজ রাতেই সে কাজটা করে পালাবে। দরকার হলে বর্ডার ক্রস করে ভারতে চলে যাবে।

দারওয়ানের ঘরের পাশে মালীর ঘর। সেখানে ঘুরে দেখে নিলো কি কি আছে। নিশ্চিন্ত হল খুনের অস্ত্র মজুদ আছে দেখে। নিড়ানি ছাড়াও বাঁকানো ধারালো কাস্তে আছে কয়েকটা। কাস্তে দিয়ে কি কাটে মালী, ভাবল সে। গেইটের পাশে কাশবনের ঝোপ দেখে বুঝে নিলো।

সন্ধ্যার পর একটা কাস্তে লুকিয়ে নিজের ঘরে এনে রাখল বালিশের তলায়।

কাল সকালে তাকে স্কুল থেকে ছেলেটাকে কিডন্যাপ করতে হবে। এমন কথাই জানালো চেয়ারম্যান আফলাতুন সাব। তার আগেই চেয়ারম্যানকে খুন করতে হবে। নইলে চেয়ারম্যানের লোক তাকে খুন করতে চাইবে।

রাতের খাবার তার গলায় ঢুকল না। হাতে কোন অপারেশন থাকলে তার এমন হয়। টেনশনের চোটে খেতে পারে না। সবাই খেয়ে নিয়েছে। একসাথে বসে খেয়েছে চেয়ারম্যানসহ। পিস্টন খাবার নাড়াচাড়া করে উঠে গেছে।

রাত প্রায় এগারোটা। ঢাকার তুলনায় এদিকটায় সন্ধ্যা হলে তাড়াতাড়ি সব নিঝুম হয়ে পড়ে। বসার ঘরে চেয়ারম্যান বসে একা টিভি দেখছে। নুলা আর কাউঠা ঘরে শুয়ে আছে। তখন পিস্টন এসে তাদেরকে তার খুনের প্ল্যানটা জানালো।

নুলা কখনো অবাক হয়না। পিস্টন যা সিদ্ধান্ত নেয়, সে সেটার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। এটাই তার স্বভাব। পিস্টন ওদেরকে রেডি হয়ে দেয়াল টপকে বাইরে চলে যেতে নির্দেশ দিলো। তারপর নিজে কাস্তেটা বের করে পেছন দিকে জামার তলায় ধরে বসার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।

চেয়ারম্যান ইজি চেয়ারে শুয়ে ঝিমুচ্ছে। টিভি চলছে। দারওয়ান লোকটা চেয়ারম্যানের হুঁকাটা উঠিয়ে নিয়ে গেলো। সে এখন রুমে একা।
পিস্টন নিঃশব্দে এগিয়ে গেলো পেছন থেকে। তারপর কাস্তেটা বের করে গলায় বসিয়ে একটানে এপাশ থেকে ওপাশে নিয়ে গেলো। করাতের মত দাঁতওয়ালা কাস্তের পোঁচে চেয়ারম্যানের ধড়টা গলা থেকে প্রায় আলাদা হয়ে এলো। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটল। গোঁ গোঁ করে আওয়াজ বের হচ্ছে তার গলা দিয়ে।
পিস্টন হাতের রক্ত মুছল চেয়ারম্যানের সাদা পাঞ্জাবীতে। তারপর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো। পথে দারওয়ানের সাথে দেখা হলে জানালো – তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। জাগাতে নিষেধ করেছে। আমি বাতি কমিয়ে দিয়ে এসেছি।

দারওয়ান ফিরে গেলো।

পিস্টন চুপিসারে দেয়াল টপকে বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো। একটু দুরে অপেক্ষা করছে নুলা আর কাউঠা। ওরা মেইন রোড এড়িয়ে গলি ঘুপচি দিয়ে বাস স্ট্যান্ডের দিকে ছুটল। ঢাকা গামী যে কোন একটা বাস ধরতে হবে। আসার আগে টেবিলে পড়ে থাকা চেয়ারম্যানের মানিব্যাগের টাকাগুলি বের করে নিতে ভুলে নাই পিস্টন।
হাঁটছে দ্রুত। অনেক দ্রুত। দ্রুত পালাতে হবে জয়দেবপুর ছেড়ে।
চলবে।