#উত্থান৮ – Rise of a Thug

রাসু’র খুনী আজিমপুরের বজু’রে খুন করে পিস্টন তার প্রিয়জনের খুনের বদলার সুখ পেয়েছে বটে, কিন্তু পুলিশ তাকে ছাড়ছে না। তার ছোট মুরুব্বী পুলিশের ওসি তাকে খবর পাঠিয়েছে যেন আপাততঃ সে ঢাকা ছেড়ে পালায়। নইলে ধরা পড়লে তার নাকি কিছু করার থাকবে না। দিন দুপুরে অনেক মানুষের সামনে খুন। প্রমাণের অভাব নাই। অতএব সেদিনই পিস্টন, নুলা আর কাউঠা ঢাকা ছাড়ল।

কালীগঞ্জের ওস্তাদ অনেকদিন ধরে তাকে ডাকছিল সেদিকে বেড়াতে যেতে। এই সুযোগে পিস্টন কালীগঞ্জে চলে এলো। পালানো এবং বেড়ানো দুইটাই হবে। অনেকদিন রেস্ট নেয়া হয় নাই। এইতো ভাল সুযোগ এসেছে। পঁচা কাজ থেকে কিছুদিন দুরে থাকা যাবে।

হামদু ভাইয়ের বাড়িতে এসে জামাই আদরে দিন কাটছে তাদের। পুকুরের মাছ, খোঁয়াড়ের মুরগী, ডিম, গাছের কলা,কাঁঠাল এসব খাওয়ার অভিজ্ঞতা পিস্টনের খুব বেশী নাই। গ্রামে এসে এতো ভাল খাবার খেয়ে তারা একটু অলসই হয়ে পড়েছে। এলাকার একচ্ছত্র অধিপতি হামদু ভাই। তার কথা ছাড়া একটা পাতা নড়ে না। তবুও তিনি রাতের বেলায় বাড়ির চারপাশে পাহারা বসায় ওদের নিরাপত্তার কথা ভেবে। ষণ্ডা কিসিমের মানুষগুলিকে দেখলে পিস্টনের মত ঠাণ্ডা মাথার খুনীরও বুক হিম হয়ে যায়। বুঝল এরা গুলি করার চেয়ে গরুর মত জবাই করে মানুষ মারতে বেশী পছন্দ করে। সবার কোমরে ঝুলছে খাপে ভরা লম্বা ছুরি। তাতেই যা বুঝার বুঝে নিয়েছে পিস্টন। নিজেদের সাথে কোন অস্ত্র নাই। এখন যদি এরা ওদের গলায় পোঁচ দিয়ে জবাই করে ফেলে দেয় খালের ভিতর, কিছুই করার থাকবে না।

হামদু খুব কম কথা বলে। ঢাকার এক অপারেশনে হাতিরপুলে বসে পরিচয় হয়েছিলো। পিস্টন তাদের সেবার সাহায্য করেছিল। তখন হামদু বলে দিয়েছিল দরকার হলে যেন তাকে স্মরণ করে।

এখানে আসার পর শুধু বলেছে, যতদিন খুশী থাকো। খাও দাও, ফুর্তি করো – নো চিন্তা।
কাল রাতে যাত্রা দেখতে গিয়েছিল ওরা হামদুর লোকজনের সাথে। ঢাকায় একবার যাত্রা দেখেছে পিস্টন কলাবাগানের মাঠে। সেই থেকে যাত্রার কথা শুনলে সে আগ্রহী হয় । খুব প্রাণবন্ত ব্যাপার।

যাত্রা শেষে বাড়িতে ফেরার পথে একজন জিগায় – কি ভাই নায়িকারে পছন্দ হইছে নাকি ! মনে তো হয়। যেভাবে হা কইরা চাইয়া রইছিলেন। লাগলে কন, হাজির কইরা দিমুনে। হামদু ভাই, আপ্নেগো কোন কিছুর কমতি রাখতে না করছে।

এই কথা শুনে পিস্টনের হঠাত কুন্তির কথা মনে পড়ে গেলো। কুন্তির সাথে আর কথা বলা হয় নাই। খুন করে ঢাকা ছাড়তে হল । মনে মনে ভাবছে কুন্তিকে সত্যি তার ভাল লাগে। আর সেজন্যই বোধ হয় সে অন্য মেয়েদের সাথে সময় কাটাতে পারবে না আর। নুলা আর কাউঠা সম্মতির জন্য পিস্টনের মুখের দিকে চেয়ে রইলো।
সে শুধু মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিয়ে বলে – তরা গেলে, যা না! আমি ঘরেই থাকি।

নুলা আর কাউঠা মুখ চাওয়া চাউয়ি করে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

এখানে আসার পর থেকে খেয়াল করেছে, রাস্তাঘাটে অনেক কুকুর ঘুরে বেড়ায়। কোনটা নাদুস নুদুস,আবার কোনটার অবস্থা একদম অস্থিসার। ওদের দেখলেই কেন জানি ওর খুব মায়া লাগে। ইচ্ছা করে গরু জবাই করে রান্না করে ওদের পাশে ডেকে এনে খাওয়াতে। অনেক রাত এখন। একটা কুকুর খুব করুন স্বরে বিলাপ করছে আশেপাশে কোথাও। শুনে ওর মন খারাপ হয়ে গেলো। নিশ্চয়ই খালি পেটে আছে বেচারা। ক্ষিধার কষ্ট কেমন, পিস্টন জানে।

রুমের টেবিলে রাতের খাওয়া ঢেকে রাখা আছে। যাত্রা দেখতে বসে অনেকবার চা খেয়েছে। ক্ষিধা নষ্ট হয়ে গেছে। উঠে গিয়ে একটা প্লেটে ভাত মাংস নিয়ে মাখালো। তারপর প্লেটটা নিয়ে ঘরের বাইরে এলো। দেখে উঠানে লাল রঙের কুকুরটা বসে আছে। পিস্টন একটা কলাপাতা চিরে এনে তার উপর ভাতগুলি ঢেলে দিলো। কুকুরটা দৌড়ে তার পাশে এসে লেজ নাড়াতে শুরু করলো আনন্দে। মুখ দিয়ে কুঁই কুঁই আওয়াজ করে খাওয়ার অনুমতি চাইলো যেন। হাত নেড়ে সে ইশারা করলো খেতে। সাথে সাথে কুকুরটা হুমড়ি খেয়ে পড়লো। তার আগে ঘেউ ঘেউ করে কাউকে ডাকলো। একটু পর আরো দুটো হাড্ডিসার কুকুর এসে তার সাথে যোগ দিলো। ঘপাঘপ খেয়ে নিলো ভাতগুলি তিনজনে মিলে। তারপর কলাপাতা চাটতে লাগলো। একটুও ঝগড়া করলো না।

কি অদ্ভুত ! মায়া পড়ে গেলো ওদের উপর। খাওয়া শেষ ওরা চলে গেলো না। কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে পিস্টনের দিকে তাকিয়ে পা ভাঁজ করে বসে রইলো সবাই। দেখে তার মন ভাল হয়ে গেলো।

রাস্তার কুকুরের প্রতি পিস্টনের খুব দুর্বলতা আছে। ঢাকায় সে সুযোগ পেলে ক্যাফেটেরিয়া থেকে ভাত কিনে এনে কুকুরদের খাওয়াতো। নিজের জীবনের সাথে সে খুব মিল খুঁজে পায়, তাই হয়তো।

হামদু বাড়িতে নাই। এলাকার বাইরে গেছে কোন কাজে। এলাকায় তার যেমন প্রভাব আছে, পরিচিতি আছে। শত্রুরও অভাব নাই।

বেশী চা খেলে পিস্টনের চোখের ঘুম উবে যায়। আজও সেই অবস্থা হয়েছে। তাদের থাকার ঘরটা মূল বাড়ি থেকে আলাদা। এখন সে ছাড়া আর কেউ নাই সেই ঘরে। নূলারা বাইরে গেছে হামদুর লোকদের সাথে। পিস্টন একদম একা। কিন্তু তার খারাপ লাগছে না। বরং রাতের সুনসান নীরবতা ভাল লাগছে। মাঝে মাঝে জোনাকিরা আলো জ্বালিয়ে পাশ দিয়ে উড়ে সরে যাচ্ছে। অন্ধকার রাতে সেই আলো জ্বল জ্বল করে জ্বলে উঠে আবার হারিয়ে যায়।

কুকুরগুলিকে খাওয়ায়ে মনটা ফুরফুরা লাগছে। ইচ্ছে হল অন্ধকারে হেঁটে বেড়াতে। একটা সিগারেট ধরালো সে। লোড শেডিং হয় বেশ এখানে। কোথাও বাতি জ্বলছে না। ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার চারিদিকে। একটা টর্চ লাইট হলে ভাল হত। কিন্তু নাই তো। ঘরের দরজাটা টেনে দিয়ে সে অন্ধকারে বের হয়ে এলো। সিগারেটে টান দিয়ে ধুঁয়া ছাড়ছে। উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটা শুরু করলো।

পরনে জিন্স আর টিশার্ট। পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল। গলায় বস্তির বুড়িমা’র দেয়া তাবিজটা ঝুলছে একটা কালো তাগায়। থপ থপ আওয়াজ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখে কুকুরগুলি নীরবে তার পিছু নিয়েছে। কৃতজ্ঞতার নমুনা দেখাচ্ছে। পিস্টন দাঁড়িয়ে পড়ে ওদের দিকে তাকালো।

হাত তুলে বলে – তোদের আসতে হবে না। বাড়িতেই থাক। আমি হারিয়ে যাবো না। পথ চিনে চলে আসবো। না চিনলে তোদেরকে ডাকবো।

কুকুরগুলি যেন তার কথা বুঝলো। সাথে সাথে বসে পড়লো যেখানে ছিল সেখানেই। দেখে পিস্টনের খুব মজা লাগলো। ভাবলো, ভালো সঙ্গী পাওয়া গেছে দেখি। অন্ধকারে হেঁটে বেশ কিছুদূর এগিয়ে এলো। বাড়ির সীমানা পেরিয়ে গেছে। কোথাও কেউ নাই। কোন আওয়াজ নাই। আলো নাই। সে ভয় পায় না। অন্ধকারে চলার অভ্যাস তার নতুন না।

রাস্তার দুইপাশে ঘন গাছপালা। ঝোঁপঝাঁড়। দূরে ঝোঁপের পাশে সিগারেটের লাল আগুন দেখলো সে। আগুনটা স্পষ্ট হয়ে আবার ম্লান হয়। মানে কেউ আছে ওখানে। বসে সিগারেটে টান দিচ্ছে। এতরাতে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকারে ঝোঁপের ভিতর বসে কেউ সিগারেট টানবে কেন !

আজব তো !

ভাবতে ভাবতে আরো এগিয়ে গেলো। ঝোঁপটা এখন তার খুব কাছে। এবার বুঝলো একজন নয়, দুজন ওখানে সিগারেট টানছে।
দুটো আগুন দেখলো। থাকগে, টানলে টানুক না। তার কি আসে যায় ! সব ব্যাপারে নাক গলানো ঠিক না। এইটা তার এলাকা না। বাড়তি ঝামেলায় জড়ানোর দরকার কি ! ভেবে নিজের সিগারেটে শেষ টান দিয়ে পায়ের নীচে পিষে নেভালো। এবার বাসায় ফিরে যাই ভেবে ঘুরে দাঁড়ালো।

ঠিক তখুনি ঝোঁপের ভিতর থেকে খসখস আওয়াজ আর তার সাথে চাপা আর্তনাদের মত স্বর শুনলো মনে হয়। ব্যাপার কি, কি হচ্ছে ওখানে !

চুপিচুপি গিয়ে দেখে আসবে নাকি, ভাবলো। যে কোন ব্যাপারে তার কৌতূহলের সীমা নাই। যেই ভাবা সেই কাজ। চিতার মত লম্বা পা ফেলে নিঃশব্দে এগিয়ে গেলো শব্দের উৎস লক্ষ করে। কাছে গিয়ে গাছের আড়ালে লুকিয়ে দাঁড়ালো। অন্ধকারে কিছুক্ষন থাকলে আঁধার চোখে সয়ে যায়। মাথা বের করে উঁকি দিয়ে দেখে মাটিতে দুজন মানুষ ধস্তাধস্তি করছে। আরো দুজন মানুষ একটু দূরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে আপন মনে।

এবার পরিষ্কার শুনলো অস্ফুট গোঙ্গানী। কোন মেয়ের কণ্ঠস্বর ওটা। সেকেন্ডে সে যা বুঝার বুঝে ফেললো। ওখানে কাউকে ধরে এনে ধর্ষণের চেষ্টা চলছে। এই কাজটা পিস্টন মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। মাথায় খুন চড়ে গেলো। অসুরের মত শক্তি আছে গায়ে তার। একা তিন চারজনকে ঘায়েল করতে পারে।
কিন্তু সেটা নিজের এলাকায় হলে ভাল হয়।

অন্য এলাকায় বলে সে কি চুপ করে সহ্য করবে ?

না, তাও সম্ভব না।

এগিয়ে গিয়ে সিগারেট টানতে থাকা দুইজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় তাদেরকে ধরাশায়ী করে ফেললো নাকে একের পর এক ঘুষি চালিয়ে। দর দর করে রক্ত ঝরছে দুজনের নাক দিয়ে।
ওরা চিৎকার করে উঠলো – ওরে বাবারে,মাইরা ফালাইলো রে।

এবার পিস্টন মেয়েটির সাথে ধস্তাধস্তি করতে থাকা লোকটার চুলের মুঠি ধরে টেনে উঠিয়ে তলপেটে কষে এক লাথি চালালো।

মেয়েটা উঠে দাঁড়ালো। থরথর করে কাঁপছে সে।

পিস্টন তার দিকে না তাকিয়েই বলল – এই মেয়ে পালাও এখান থেকে। যত জোরে পারো, দৌড়াও। মি এদেরকে আটকাচ্ছি।

পেছন থেকে নাক ফাটানো একজন এসে তাকে জড়িয়ে ধরে গলায় চুরি ধরলো। তাকিয়ে দেখে চকচক করছে সেভেন গিয়ারের ফলাটা। ছুরিটার ভাঁজ খোলার কটকট আওয়াজটা কেন পায় নাই, সেজন্য নিজেকে তিরস্কার করলো।

দ্রুত ভাবছে সে। সময় নষ্ট করলে মরণ আছে আজ কপালে। তার বাম হাতটা লোকটা বেকায়দায় জাপ্টে ধরেছে। ডান হাতের কনুই দিয়ে সে লোকটার পেটে হাতুড়ির মত প্রচন্ড জোরে আঘাত করলো। ঘোঁৎ করে আওয়াজ করে সে ছিটকে পড়লো। এবার দেখে আরেকজন এগিয়ে আসছে। তার হাতেও ছুরি। লম্বা ব্লেডের চুরি। ভোজালির মত দেখতে।

আজব তো, ওরা কি সবাই কসাই নাকি ! খালি চুরি নিয়ে ঘুরে। বেশিক্ষন ভাবার সময় নাই। পেটে গুতা খেয়ে পেছনে পড়ে থাকা লোকটার হাত থেকে ছুরিটা ছিনিয়ে নিয়ে দুর্বার গতিতে সামনে এগিয়ে আসা লোকটার পেটের ভিতর সেঁদিয়ে দিলো পুরো ব্লেডটা। ডানে আর বামে দুবার টানলো। তারপর উপরে নীচে। পেট থেকে রক্তমাখা নাড়ি ভুঁড়ি বের হয়ে তার হাতের উপর পড়লো। তার খেলা শেষ। খুন হয়ে গেছে লোকটা চোখের নিমিষে। একজনের খুন হয়ে যাওয়া দেখে বাকি দুজন কিছুক্ষন বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো। তারপর উঠে দৌড়ে পালালো।

খুন করে পালাতে এসে আবার খুন করে বসলো পিস্টন। এমন তো পরিকল্পনা ছিল না তার। উপায় ছিল না। লোকটাকে না মারলে সে নিজে খুন হয়ে যেত এতক্ষনে। হয়ত তারা তার লাশও পুঁতে ফেলতো ঝোঁপের আড়ালে।

লোকটার নিথর দেহ মাটিতে পড়ে আছে। চারিপাশে রক্তের পুকুর জমেছে। নিশ্বাস নিচ্ছে না সে। তারই জামায় হাত মুছে রক্ত পরিষ্কার করে উঠে দাঁড়ালো পিস্টন। পালাতে হবে এখান থেকে। দ্রুত পালাতে হবে। এরা কার লোক কে জানে। হামদুর হলেও অবাক হওয়ার কিছু নাই। যেই হোক, পুলিশ, এলাকার মানুষ কেউ তাকে ছাড়বে না।

ঘুরে মাত্র পা ফেলতে যাবে ঠিক তখুনি কেউ তার মাথার পেছনে খুব জোরে আঘাত করলো ভোঁতা কিছু দিয়ে। মুহূর্তে সে কাটা কলাগাছের মত ধড়াশ করে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারালো। অল্পক্ষনের জন্য। মাথার ভিতর ভোঁ ভোঁ আওয়াজ করছে। কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ শুনছে। চোখ মেললো। ভীষণ যন্ত্রনা করছে মাথার পেছনে। টের পেল তাকে গাছের সাথে পেঁচিয়ে বেঁধে ফেলেছে বাকি দুইজন।

সে চোখ মেলতে তার দিকে তাকিয়ে একজন বলে – এই শুয়োর, তুই কে রে ! এই এলাকায় তো তোরে দেখসি বলে মনে হয় না। কোথায় থাকিস !

পিস্টন বুঝলো, এরা হামিদুর লোক না। কিন্তু হামদুর চেয়েও আরো ভয়ংকর কিসিমের হবে। যেমন করে হোক, ওদের হাত থেকে ছুটতে হবে। নইলে নির্ঘাত মৃত্যু। খুব যন্ত্রনা দিয়ে মারবে ওরা তাকে। হয়ত কেটে টুকরা টুকরা করে কুকুরকে খেতে দেবে তার মাংস।

কিন্তু কেমন করে পালাবে সে। কে আসবে তাকে বাঁচাতে এখানে ! নূলারা তো জানেই না তার খবর।

কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ শুনেছিলো অজ্ঞান অবস্থায়। এবার খুব কাছে থেকে আবার শুনলো। একসাথে অনেকগুলি কুকুরের আওয়াজ। ওরা এলো। এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওই দুইজনের ওপর। কামড়ে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললো তাদের। পালাতে দিলো না তাদের। কামড়ে ধরে রাখলো।

আর সেই কুকুরটা, যাকে ঘন্টা দুয়েক আগে সে খেতে দিয়েছিলো, লাল রঙের সেই কুকুরটা তারপাশে এসে লেজ নাড়াতে লাগলো। জ্বিব দিয়ে তার হাত চেটে দিলো। পিস্টনের হাত বাধা গাছের সাথে। সে কুকুরটাকে ইশারা করে সেটা বুঝতে চাইলো।

মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধি রাখে কুকুর। তেমনি আছে তাদের প্রখর কৃতজ্ঞতাবোধ প্রভুর প্রতি। কয়েকবার তার চারপাশে ঘুরলো। ঘুরে বুঝতে চেষ্টা করলো। তারপর দড়ির বাঁধন ধরে টানতে লাগলো। দাঁত দিয়ে টানাটানি করে ঢিলে করে ফেললো হাতের বাঁধন। বাকিটা পিস্টন নিজেই খুলে ফেললো। কুকুরটাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো সে। এরপর বাকি দুইজনকে শক্ত করে গাছের সাথে বেঁধে ফেললো। তাদের পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখের ভিতর গুঁজে দিলো যে চিৎকার করে মানুষ ডাকতে না পারে।

এবার একরকম দৌঁড়ে সে বাসায় ফিরে এলো। দেখে নুলা আর কাউঠা বসে বসে মদ গিলছে আর হেঁড়ে গলায় গান গাইছে আনন্দে। তাদের মন ভরেছে যাত্রার নায়িকার সাথে সময় কাটিয়ে।

পিস্টনকে দেখে চমকে উঠলো তারা। বিপযস্ত চেহারা। জামায় রক্তের দাগ। বুঝলো কোথাও বড় ঝামেলা হয়ে গেছে।

পিস্টন শুধু বলল – এক্ষুনি পালাতে হবে। ভোর হওয়ার আগেই। নইলে সবাইকে মেরে ফেলবে কুপিয়ে।

নুলা বুঝলো বিপদের গুরুত্ব। কোন প্রশ্ন না করে সে উঠে গিয়ে হামদূর গ্যারাজ থেকে তার শখের উইলি জিপটা বের করলো। পরে কখনো এর জন্য তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে। স্টার্ট দিয়ে তিনজন রাতের অন্ধকারে কালীগঞ্জ ছেড়ে পালাতে শুরু করলো।

ভোর হতে শুরু করেছে। দূরে কোথাও থেকে ফজরের আজানের সুর ভেসে এলো — আসসালা তুই খাইরুম মিনান নাউম।

পিস্টন মাঠির রাস্তা ধরে ঝড়ের বেগে জীপ চালাতে শুরু করলো।
চলবে।