#প্রেমরোগ_২

মহাখালী ওয়ারলেসের কাছে আদর্শ বিদ্যালয়ে ক্লাস টু তে পড়ি তখন। ক্লাসের একপাশে ছেলেরা, আরেক পাশে মেয়েরা বসে। ডেইজী ছিল ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল। ঘোলা চোখের দারুন সুশ্রী মেয়ে। ক্লাস ক্যাপ্টেন সে। পুরো সবার হোম ওয়ার্কের খাতা নেয়া, ফেরত দেয়ার কাজ ডেইজী করত।

আমার খুব ভাল লাগত ওকে। পাশে বসা বন্ধু ভয়ংকর দুষ্ট বালক সাবুকে কি মনে করে মনে হয় সেই ভাল লাগার কথা বলে ফেলেছিলাম।

হারামিটা একটা কাগজে লিখল – ‘মুরাদ লাভস ডেইজী’।
তারপর সেটা মেয়েদের সাইডে ছুঁড়ে দিল।

ব্যস, সর্বনাশ হয়ে গেল আর কি !

এক দজ্জাল মেয়ে সেটা পেয়ে ডেইজীর হাতে নয়, সোজা সেই সময়ে ক্লাস রুমে থাকা লতিফা আপার হাতে ধরিয়ে দিল চিরকুটটা।

আর যায় কোথায় !
আমার কপালে হাবিয়া দোজগের শাস্তি নাজিল হয়ে গেল। লতিফা আপা একবারও চিরকুটের লেখাটা আমার হাতের লেখার সাথে মেলালো না। উলটা আমাকে ডেকে নিয়ে পুরো ক্লাসের সামনে ডাস্টার দিয়ে মেরে হাঁড় গোড় গুঁড়িয়ে দিল। যাকে নিয়ে এত কিছু, সেই ডেইজী কিন্তু তখনো কিছুই জানে না। শুধু মেরে ক্ষান্ত হন নাই আপা। ক্লাসের বাইরে বারান্দায় আমাকে নীল ডাউন করে বসিয়ে রাখলো কানে ধরিয়ে ক্লাসের বাকি সময়টুকু।

ডেইজী ক্লাস ক্যাপ্টেন, তাই সে সবার হাতের লেখা চেনে। পরে সেই চিরকুট দেখে সে বুঝে ফেলেছিল ওটা আমার হাতের লেখা নয়, সাবু’র লেখা। সাবুও মার খাবে তাই আপাকে আর সেটা জানায় নাই। অন্যের কারনে আমি এত মার খাওয়ায় ডেইজী সেদিন খুব কেঁদেছিল। তাই বলে প্রেম হয়ে যায় নাই। কিন্তু টিফিন বিলির সময় ডেইজী কেন যেন আমাকে একটা টিফিন বেশী দিত চুপিসারে। তাতেই আমি একা একা ওর প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে গদগদ হয়ে পড়েছি। কিন্তু মাইরের ভয়ে ভুলেও আর কোন দিন কিছু উচ্চারন করি নাই।

অনেক পরের কথা। সময়টা ১৯৯৮ সাল ছিল মনে হয়। দেশে বেড়াতে গিয়ে রাস্তায় সাবু’র সাথে দেখা হয়ে গেল।

আচমকা সাবু আমাকে বলে – মুরাদ, ডেইজীর কথা মনে আছে তোর ?

আমি বলি – আছে তো ! ক্যান কি হইসে ওর ?

সাবু আর কোন কথা না বলে আমাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলল।

বলে – চল, তোকে সারপ্রাইজ দিবো আজ।

আমরা তখন মহাখালীর কাছে কোথাও রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। আমাকে নিয়ে মহাখালী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে গেল। ওখানে গিয়ে সে আমাকে যার সামনে হাজির করল, ভাল করে তাকিয়ে দেখি সে আর কেউ নয়, আমার ছোটবেলার পছন্দের মেয়ে, ক্লাস ক্যাপ্টেন ডেইজী। সব বদলে গেছে। এপ্রন পরে কাঁধে স্টেথো ঝুলানো। ডাক্তার সে। কিন্তু সেই ঘোলা চোখ আগের মতই আছে। আগের মতই সুশ্রী। সাবু’র সাথে আমাকে দেখে সাথে সাথে চিনে ফেলল।

এক গাল হেসে বলে – তুমি মুরাদ না ? এখনো ‘ভালবাসি’ লিখে মেয়েদেরকে চিরকুট পাঠাও নাকি ?

সবাই মিলে প্রান খুলে হেসেছিলাম সেদিন। 😀

১৪ই ফেব্রুয়ারি,২০১৮
চলবে……
#প্রেমরোগ_৩