#প্রেমরোগ_১

কার কেমন ধারনা জানি না, আমার কাছে মনে হয়েছে প্রেম রোগের ভাইরাস মানুষ মায়ের পেট থেকে নিয়ে জন্মায়। নারীর ভালবাসার ছোঁয়া পেয়ে জন্ম নেয় বলেই মনে হয় ছেলে মেয়ে সবার উপর প্রেম পিরীতির রোগ বালা মুসিবত আছর করে বসে অন্য কিছুর বুদ্ধি হওয়ার আগে থেকে।

শফিক রেহমান নামের সুন্দর মনের মানুষটা আমার খুব প্রিয়। বিশেষ করে তার ‘যায় যায় দিন’ পত্রিকার মইন মিলা’র কথোপকথন পড়ে রোমাঞ্চিত হতাম কলেজ জীবনে। নোংরা রাজনীতির ভিন্ন সমর্থনের কারনে কেউ কেউ এই মানুষটিকে খুব তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলে, খেয়াল করেছি। আমি মনে করি, সেসব মানুষগুলির ভিতর বিন্দুমাত্র রসবোধ নাই। তাই তারা এমন অশ্রদ্ধা করে কথা বলতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্বাস তো ভিন্ন হতেই পারে। তাই বলে গুনী মানুষকে অশ্রদ্ধা করি কিভাবে, যদি না তিনি অপ্রীতিকর কোন কাজ করেন।
অনেকের ধারনা, শফিক রেহমান বাংলাদেশে ভালবাসা দিবসের ধারনা চালু করে দিয়ে মানুষকে বিপথে পরিচালিত করেছেন।

কি ফালতু কথা !
প্রেম ভালবাসা কি নতুন কিছু নাকি !

শফিক রেহমানের কারনেই কি মানুষ প্রথম ফুল আর কার্ড কেনা শিখলো নাকি ! আমি মোটেও সেটা মনে করি না।

হ্যাঁ, আগে মানুষ বিশেষ করে সন্তানের মা বাবারা তাদের মনোভাব প্রকাশ করত না। করতে লজ্জা পেত কিংবা পর্দার অন্তরালে লুকিয়ে প্রকাশ করত। এখন শফিক রেহমানের চালু করা ভালবাসা দিবসের কারনে সবাই মনের আনন্দে খোলাখুলিভাবে সেটা প্রকাশ করে। উপলক্ষ বানিয়ে আনন্দ করে। এতে খারাপ কিছু তো দেখি না। বরং খুব ভাল একটা ব্যাপার। মানুষ মনের আনন্দে এই দিনে যার যার ভালবাসার মানুষের কাছে উপহার নিয়ে হাজির হয়। সারপ্রাইজ দেয়।যেই দেশে ঈদ, পুজা, জন্মদিন কিংবা বিয়ে ছাড়া পুরো পরিবার নিয়ে আনন্দ করার জন্য সকল স্তরের মানুষের আর কোন ব্যবস্থা নাই, তাদের কাছে ভ্যালেন্টাইন ডে অনেক কাংখিত একটা দিন। আমি অন্তত তা’ই মনে করি। নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ।

অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধাভাজন মানুষ শফিক রেহমানকে।

কার কখন শুরু হয়েছে জানি না। তবে আমার প্রেম রোগ শুরু হয়েছে একেবারে শিশুকালে।চোখ কান ঠিকমত ফোঁটার আগে প্রেমের অনুভুতি চলে এসেছিল। জন্ম পাকনা মনে হয় একেই বলে। আসোলেই।

কত বয়স হবে তখন ? পাঁচ কিংবা ছয় হয়ত। আমাদের বাসায় নন্দীবাবু নামের এক ভদ্রলোক আসত ওনার পরিবার নিয়ে। পরিবার বলতে ওনার স্ত্রী এবং মেয়ে ইন্দিরা। বাবার কাছে হয়ত কোন কাজ ছিল ওদের। তাই প্রায়ই ঢাউস গাড়ি চালিয়ে হাত ভর্তি কেইক পেস্ট্রির বাক্স নিয়ে হাজির হতেন ওনারা। বড়রা সবাই যখন ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করত, আমরা ছোটরা বাসার সামনের গাড়ি বারান্দায় বসে খেলতাম। ইন্দিরা এসে দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখত। খুব ফিটফাট থাকত সে। সুন্দরী তো অবশ্যই। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম ওকে। ওরা মনে হয় খুব বড়লোক ছিল। তাই ইন্দিরার জামা কাপড় থেকে সুন্দর সুগন্ধ বের হত। আমার ধারনা ছিল শুধু বড়লোকদের পাশ দিয়ে হাঁটলেই এমন ফুলের মত সুন্দর গন্ধ পাওয়া যায়। আমাদের বাসার কারো কাছ থেকে এমন গন্ধ পাই নাই কখনো।

সেই ইন্দিরা আমাদের সাথে খেলতে চাইলো। আমি তো মহাখুশী। কারন তাঁকে দেখে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। সেদিনের খেলা ছিল ‘বৌ জামাই’ সাজা। আমি বৌ হিসাবে ইন্দিরাকে বেছে নিলাম। ইন্দিরা আমাকে জিজ্ঞেস করে, বৌ জামাই হলে কি করতে হয়। মনে আছে, আমি বলেছিলাম, বৌ জামাই হলে দরজা বন্ধ করে দিতে হয়। কেন বলেছি আল্লাহ মালুম। হয়ত বড়দের কাউকে এমন করতে দেখেছিলাম। তারপর আমরা যে যার জোড়া নিয়ে লুকালাম। আমরা লুকিয়েছিলাম সারভেন্ট’স টয়লেটে। ওখানে ঢুকে দরজা বন্ধ করে হাবার মত ইন্দিরাকে বলেছিলাম, বৌ জামাই হলে জড়িয়ে ধরে রাখতে হয়। তাই করেছিলাম। একটু পর সে অভিযোগ করে উঠলো, টয়লেট থেকে নাকি হাগুর গন্ধ লাগছে। তাই আমরা সময় শেষ হওয়ার আগেই বের হয়ে গিয়েছিলাম। তবে মেয়েটাকে আসোলে খুব পছন্দ হয়েছিল আমার।

চলবে …
১৪ই ফেব্রূয়ারি , ২০১৭