#উত্থান৭  – Rise of a Thug

ঈদের ছুটির আরো কয়েকদিন পরে হলে ফিরে এলো বকুল। দিনাজপুরে তার বাড়ি। সারাদিন জার্নি করে হলে পৌঁছে টের পেলো তার শার্টের ভেতরের পকেটে লুকিয়ে রাখা পাঁচ হাজার টাকা নাই। গায়েব হয়ে গেছে।

মনে করতে চাইলো শেষ কখন টাকাটা পকেটে ছুঁয়ে অনুভব করেছিলো। দুপুরে খাওয়ার জন্য রাস্তার পাশে ওয়েটিং এরিয়ায় বাস থেমেছিল। তখন বাস থেকে নামতে গিয়ে একজনের গায়ের সাথে ধাক্কা লেগেছে। সে বিপদ টের না পেয়ে উল্টা সরি বলেছিল। এখন লোকটার চেহারা তার চোখের সামনে ভাসছে। একদম ষণ্ডা মার্কা তেলতেলে চেহারার একটা লোক। নির্ঘাত সেই ষণ্ডাটাই পকেট মেরে দিয়েছে তার।

লেপতোশক সব পুরনো হয়েছে। নতুন বানাতে হবে। বাবা বাড়ি থেকে বানিয়ে সাথে ধরিয়ে দিতে চেয়েছিল। এতদূর ওসব বহন করে আনা যায় নাকি ! তাই বাবাকে বুঝিয়ে বলেছিল সে নীলক্ষেত থেকে অনেক কম দামে ওসব কিনতে পারবে। এছাড়া একজোড়া এডিডাস স্নিকার পরার সখ তার অনেকদিনের। সব মিলিয়ে বাবা তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিল একটা খামে ভরে। টাকাটা শার্টের বুক পকেটের ভেতর দিকে বানানো চোরাই পকেটে রেখেছিল।

হলের গেস্ট রুমে সোফায় কাত হয়ে শুয়ে সে আনমনে ভাবছিল, পকেটমার কেমনে টের পেলো টাকার ব্যাপারটা। আজব তো ! এতোগুলি টাকা হারিয়ে গেলো। বাবাকে আর বলতে পারবে না। কেমন করে পুরো মাস চলবে। ইয়াসিন ভাই’র দোকানে বেশ বাকি পড়েছে। লেপ তোষক কেনা হবে না। এডিডাস আর পায়ে উঠবে না। স্বপ্নই থেকে যাবে। এলিফ্যান্ট রোডের লংমার্চে বলে রেখেছিল, দেশ থেকে ফিরেই সে টাকা দিয়ে জুতা জোড়া নিয়ে আসবে। আর আনা হবে না। পায়ের অনেকবার তালি মারা জীর্ণ বাটা’র জুতা জোড়ার দিকে তাকিয়ে ইচ্ছা করলো সেগুলি খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে। সেটা না করে হাতের স্টার সিগারেটটা আধা খাওয়া অবস্থায় ছুঁড়ে মারল রাগে দুঃখে।

পিস্টন হলের গেইটে পা রেখে খেয়াল করলো গেস্ট রুমে কেউ একজন শুয়ে আছে। উঁকি দিতেই দেখল সেটা বকুল। এগিয়ে গেলো। কিছু বলার আগেই বকুলের উড়িয়ে মারা সিগারেটটা এসে পিস্টনের পায়ের উপর পড়লো। বকুল ব্যাপারটা খেয়াল করলো না। পিস্টন বুঝল সে ওটা ইচ্ছা করে করে নাই। কোন কারণে ডিস্টারবড আছে।

এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো – কি ভাই, এমুন রাইগা আছেন ক্যান ! কি হইছে ? আপনে আইছেন কুন সুমায় সেইটাই তো জানলাম না।

পিস্টনকে দেখে বকুল উঠে দাঁড়ালো। মুখে হাসি এনে বলে – সরি ভাই খেয়াল করি নাই। কিছু মনে কইরেন না। আসছি একটু আগে। মনটা ভাল না।

কেন, বলেন তো ! দেশে কুনো সমস্যা অইছে নাকি ?

না, না দেশে সব ঠিক আছে। ঢাকায় ঢোকার আগে সমস্যাটা হয়ে গেলো। বাসে পকেটমার হয়ে সব টাকা চুরি হয়ে গেছে। পাঁচ হাজার টাকা। – বলে মুখটা করুন হয়ে গেলো তার।

শুনে পিস্টনের খুব খারাপ লাগলো। সে জানে হলের ছেলেদের বেশিরভাগই দেশ থেকে আসা খুব সামান্য পয়সায় কষ্ট করে খরচ চালায়। অনেকের সেই সামান্য টাকাটাও আসে না। তারা টুইশনি করে খরচ চালায়।

হটাত তার মাথায় বিদ্যুৎ চমকের মত গুলিস্তানের ওস্তাদের কথা মনে পড়ে গেলো। তার কাছে সে কয়দিন পকেট কাটার ট্রেইনিং নিয়েছিল। তখন জেনেছিল তাদের নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে এক বাস থেকে আরেক বাসে।

সোফায় বকুলের পাশে বসলো পিস্টন।

তারপর জিজ্ঞেস করে – আইচ্চা কন ত রাস্তার ঠিক কুনহানে আইসা টের পাইছেন যে টেকাটা পকেটে নাই।

বকুল তাকে সব বলল। শার্টের পকেটটা দেখাল। বুকের কাছের একটা বোতাম শুধু ছেঁড়া। খুব সূক্ষ্ম হাতের কাজ।

পিস্টন তার পিঠ চাপড়ে আস্বস্ত করলো। বলল – দেহি আপনার টেকাটা উদ্ধার করণ যায় কিনা। আহেন আমার লগে।

গেইটের বাইরে এসে লোকমান ভাইর মোটরসাইকেলটা চেয়ে নিলো। বকুলকে পেছনে বসিয়ে স্টার্ট দিয়ে ভোঁ করে বেরিয়ে গেলো পিস্টন।
গুলিস্তান হলের পেছনে ওস্তাদের খুপরিতে এসে ঢুকল পিস্টন সাথে বকুল।

একটা চোকির উপর বিশাল ভুঁড়ির উপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ওস্তাদ। দুইটা টোকাই ওস্তাদের পিঠের উপর উঠে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে মাড়াচ্ছে। আরামে তার গলা দিয়ে ‘গোঁ গোঁ’ করে সুখের সুর বের হচ্ছে।

পিস্টনকে ঢুকতে দেখে এক টোকাই চিৎকার করে উঠলো – ওস্তাদ আপনের পিস্টন আয়া পরসে।

বন্ধ করা চোখের একটা একটু ট্যারা করে তাকাল ওস্তাদ। পিস্টনকে দেখে এবার পুরো চোখ খুললো।
শুয়ে থেকেই বলে – কিরে এদ্দিনে তর আমার কতা মনে অইলো নি ! নাকি কুনো খাস কামে আইসছ। কয়া ফালা।

পিস্টন বকুলকে দেখিয়ে বলে – ওস্তাদ একটা বড় উপকার করতে অইবো। আমাগো হলের পোলা। বালা পোলা। আইজ হলে ফিরনের সুময় আরিচার কাছে কুনোহানে হ্যার পকেটথন পাঁচ হাজার টেকা গায়েব হয়া গেছে গা। যদি দয়া কইরা উদ্দার কইরা দিতেন, পোলাডার অনেক উপকার অইতো আর কি।

ওস্তাদ বিরক্ত হয়ে পিস্টনকে বলে – তুই যুদি এগিনি কইয়া আমাগো প্যাডে লাত্থি মারণের বন্দবস্ত করস, তয় এতোগুলি মানুষের খাওনের এন্তেজাম করুম ক্যামনে আমি, তুইই ক’ না দেহি।

ওস্তাদ, অন্য কেইস অইলে আমি আইতাম না কইলাম। এর চেয়ে বেশী টেকা তুমারে আমি বেবুস্তা কইরা দিমু দরকার অইলে। শুধু এই টেকাটা যে যেমনে নিছে এক্কেরে আসল নোটগুলান আইনা দিতে কউ। হ্যার বাপের অনেক কষ্টের টেকা এগিনি।

পিস্টনের প্রতি তার অসীম দুর্বলতা আছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলে – আইচ্চা তুই যা গিয়া। খুঁজ নিয়ে দেহি। পাইলে পরে তগো টেকা লোক যাইয়া পৌঁছাইয়া দিয়া আইবো। যা কতা দিলাম।

শুনে বকুলের চোখ কপালে উঠে গেলো। বলে কি, পকেট মাইর হলে সেই টাকা কি আর কোনদিন ফেরত পাওয়া যায় নাকি। পিস্টন দেখি এক আজব মানুষ। মাস্তানি করে। খুন খারাবি করে। কিন্তু সাধারণ কারো ক্ষতি করে না। পারলে উপকার করে। সে পিস্টনের পিছনে বসে আবার হলে ফিরে এলো। পরদিন সকালে পিস্টন তার রুমে গিয়ে সেই একই খামে ভরা তার বাবার দেয়া নোটের টাকাগুলি পৌঁছে দিয়ে গেলো।

টাকার খামটা হাতে নিয়ে শুঁকে সে বাবার গন্ধ পেতে চাইলো। মনে মনে ভাবছে বাবার অনেক কষ্টের টাকা এগুলি। তাই হয়ত হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে পেলো।
বকুলের হাতে টাকাটা পৌঁছে দিতে পেরে পিস্টনের খুব ভাল লাগছে। সব তো খারাপ কাজ করে সে। আজ একটা ভাল কাজ করতে পেরে অনুভব করলো এক ভিন্ন রকমের তৃপ্তি। মনটা ফুরফুরা হয়ে গেলো। ইচ্ছা করলো প্রিয় কোন মানুষের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করতে। পরমুহুর্তে তার মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেলো। তার তো কোন প্রিয়জন নাই। সে বস্তির একটা অশিক্ষিত ছেলে। কোন পরিচয় নাই। লেখাপড়া নাই। মাস্তান বলে তারে মানুষ ভয় করে। কিন্তু ভালবাসে না।

মনে হল, একজন ভালবাসার মানুষ থাকলে মন্দ হতো না। ক্যাম্পাসে ছেলে মেয়েরা যখন জোড়া বেঁধে বসে হৈ চৈ করে, প্রেম করে – সে চোরা চোখে তাকিয়ে দেখে। মনে মনে স্বাদ জাগে অমন একটা প্রিয় মানুষ পেতে। আবার ভাবে – ধুর, তার সাথে কে মিশতে যাবে।

এতদিন পর আজ হটাত তার কুন্তির কথা মনে পড়ে গেলো। রাসুর বান্ধবী। তার সাথে পরিচয় নাই। কিন্তু রাসু খুন হওয়ার পরদিন কুন্তি তার খোঁজে হলে এলে পিস্টন তাকে দেখেছে। ছিপছিপে লম্বা কমনীয় মিষ্টি চেহারার মেয়েটা। একপলক দেখেই তার ভাল লেগে গেছিলো। কিন্তু সেদিন আর আগে বেড়ে কথা বলতে যায় নাই।।
আজ তার ইচ্ছা করছে কুন্তির সাথে কথা বলতে।

কিন্তু তাকে পাবে কোথায় ! জানে কুন্তি রোকেয়া হলে থাকে। কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ে এটা সে জানে না। আচ্ছা সে চাইলে খুঁজে বের করা খুব কঠিন হবে না। ভাবতে ভাবতে সে মধুর ক্যান্টিনের দিকে হাঁটা দিলো সাথে কয়েকজনকে নিয়ে। ওখানে আজ একটা জরুরী মিটিং আছে।

কলা ভবনের সামনের গেইটের দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনল। প্যাকেট ছিঁড়ে একটা বের করে ঝুলানো দড়ির আগুন দিয়ে ধরালো সিগারেটটা। একটা টান দিয়ে ধুঁয়া ছাড়তেই সে ধুঁয়ার ভিতর দেখল মেয়েটা এগিয়ে আসছে তার দিকে। তাকিয়ে দেখে আরে, এতো সে, যাকে সে খুঁজছে মনে মনে। এতো কুন্তি। বাহ, এ যে দেখি না চাইতেই বৃষ্টি। হলেই কি ,কুন্তি তো তাকে চেনে না। কথা বলতে গেলে যদি ক্ষেপে যায়, তখন কি করবে !

মেয়েটা এগিয়ে এসে গেইটের সিঁড়ি বেয়ে উঠছে। কাঁধে একটা খদ্দেরের ব্যাগ ঝুলানো। ফতুয়া, আর জিনস পরনে। স্লিপার পায়ে। সাধারণ পোশাক। কিন্তু খুব সুশ্রী লাগছে তাকে দেখতে। পিস্টন ভাবল কথা বলতে গেলে পরিচয় দিলে মেয়েটা যদি ভয় পেয়ে যায়, সে আরেক বিপদ।

যা হয় হবে। আজ সে কথা বলবে। নুলাদেরকে কিছু বুঝতে না দিয়ে মধুতে যেতে বলল। তারপর লম্বা পা সে ফেলে এগিয়ে গেলো সিঁড়ির দিকে। নিজেকে কেমন লাগছে একবার তাকিয়ে দেখে নিলো। সাদা পোলো শার্ট, জিনস আর সাদা স্নিকারে তাকে খুব খারাপ লাগছে না দেখতে।

এগিয়ে গিয়ে কুন্তির পাশে চলে এলো পিস্টন। কুন্তি একবার ফিরে তাকিয়ে আবার হাঁটায় মন দিল। চোখা চুখি হতে পিস্টন মৃদু হেসে মাথা নাড়ল। কুন্তি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তাকিয়ে রইল।

এবার সে সাহস করে বলে ফেলে – আমার নাম পিস্টন।
আর কিছু বলার আগেই নির্ভয়ে কুন্তি বলে উঠে – আমি জানি আপনি কে। আমার কাছে কি কাজ বলেন তো ! পিছে পিছে ঘুরছেন কেন ?

ইয়া আল্লাহ, বলে কি মেয়েটা ! এতো চটপটে কেন ! ভয় ডর নাই দেখি – তার এমন ভাব দেখে পিস্টন নিজেই উল্টা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
টের পেলো,তার হাতের তালু ঘামাতে শুরু করেছে। নার্ভাস হলে এমন হয়।

আমতা আমতা করে বলতে শুরু করলো – ইয়ে মানে, আমাকে চেনেন কিন্তু এটাও কি জানেন যে রাসু ভাই আমার খুব কাছের মানুষ ছিলেন। আপন বড় ভাইয়ের মত ছিলেন ?
এবার কুন্তি চমকে গেলো – কই নাতো ! এতো কিছু তো জানি না। ওনার সাথে আমার খুব অল্প সময়ের পরিচয় চিল। ভাল করে জানার আগেই তো উনি … বলে থেমে গেল। মুখটা মলিন হয়ে গেলো।

পিস্টন দেরী না করে বলে – আপনার কি ক্লাস আছে এখন। নইলে কোথাও বসে কথা বলতে পারি যদি আপনার আপত্তি না থাকে !

না, এখন ক্লাস নাই। সেমিনারে যাচ্ছিলাম। আচ্ছা ওখানেই চলেন। বসে কথা বলা যাবে।

কুন্তির পাশে হেঁটে তিনতলায় সেমিনার রুমে এলো পিস্টন। তার ভয়ে বাঘে মহিষে এক ঘাটে পানি খায় আর সে কিনা এই এক রত্তি মেয়ের ভয়ে কেমন নার্ভাস ফিল করছে। কুন্তি উঠে গিয়ে দুই কাপ চা নিয়ে এলো সিঁড়ির পাশের চা ওয়ালার কাছ থেকে। তারপর পিস্টনের উল্টা পাশে মুখোমুখি বসে বলে – নেন চা খান।

হটাত বলে উঠে – রাসু তো মাস্তান ছিল। তাই আরেক মাস্তানের হাতে খুন হয়েছে। যদিও ব্যাপারটার জন্য আমি নিজেকে দায়ী করি, কারণ আমাকে বাঁচাতে গিয়ে উনি সেদিন ঐ ছেলেগুলির সাথে ঝামেলা পাকিয়েছিলেন।

তারপর আরো বলে – আপনি কি রাসুর বন্ধু নাকি ! বন্ধু হলে সেদিন রাসু একা ছিল কেন রিক্সায় ? আপনি সাথে ছিলেন না কেন ?

এতোগুলি প্রশ্নের উত্তর কি দেবে পিস্টন ভাবছিল। বলতে পারছে না সে রাসুর বন্ধু ছিল না। ছিল তার কাজের মানুষ। যদিও রাসু তাকে অনেক স্নেহ করতো।
শুধু বলল – রাসু ভাই একা চলতে ফিরতে পছন্দ করতো। সেদিন মনে হয় ওনার কারো সাথে দেখা করার কথা ছিল।

তারপর বলে উঠে – আচ্ছা, আপনার সাথেই দেখা করার কথা ছিল নাতো ?

কুন্তি আস্তে করে শুধু বলে – হ্যাঁ, আমার সাথেই দেখা করার কথা ছিল। বলে ফুঁপিয়ে উঠলো।

পিস্টন তাকিয়ে দেখে কুন্তির দুচোখ বেয়ে অশ্রুর ধারা নামছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না সে। এমন ইমোশনাল মোমেন্টে কাউকে কি বলতে হয় সে বিষয়ে তার কোন অভিজ্ঞতা নাই। উসখুস করতে লাগলো। খুব মায়াও লাগছে মেয়েটার জন্য।

বুদ্ধি করে পকেট থেকে নতুন কেনা রুমালটা বের করে এগিয়ে দিয়ে বলে – প্লিজ, এভাবে কাঁদবেন না। ওনার আত্মা কষ্ট পাবে।

ইচ্ছা করছিলো উঠে গিয়ে নিজের হাতে ওর চোখ মুছিয়ে দিতে। কিন্তু পারলো না। তাই তখন তার ইচ্ছা করলো সেখান থেকে পালিয়ে যেতে।
বলে – সরি, আপনার মন খারাপ করে দেয়ার জন্য। আমি ভাবলাম আপনার সাথে পরিচিত হই। তাই আসলাম। আমমম… এক কাজ করি। আজ বরং আমি চলে যাই। আপনি শান্ত হন। আপনার যখন কথা বলতে ইচ্ছা করবে যে কোন টোকাইকে দিয়ে শুধু সুর্যসেন হলে আমাকে খবর পাঠালেই হবে। ওরা আমাকে চেনে সবাই। আমি আসব।

কুন্তি মাথা নাড়ল। পিস্টন উঠে চলে এলো। মধুতে গেলো। কিন্তু তার মন পড়ে রইলো কুন্তির কাছে।

কি আশ্চর্য , মেয়েটাকে তার এতো ভাল লাগছে কেন !
লাগলেই কি, পিস্টন তো কোন ছাত্র না। এটা জানলে কুন্তি হয়তো আর তার সাথে আর কথাই বলতে চাইবে না।
আচ্ছা দেখা যাবে।

মধুতে পৌঁছে দেখে আইবিএ সাইডের দরজার কাছের টেবিলটায় আজিমপুরের গ্রুপটা বসে আছে। সে জানে এরাই রাসুকে সেদিন গুলি করেছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছে কে গুলি করেছিলো। ওকে সে মনে মনে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। সেই ছেলেটা গ্রুপের মাঝখানে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছে আর হাসছে সঙ্গীদের সাথে। এরা কেউ ক্যাম্পাসের ছেলে না। কারো হয়ে মারামারি করতে এসেছে নির্ঘাত। কিন্তু পিস্টন প্রতিশোধ নেয়ার এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজী না।

নুলার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে জিজ্ঞেস করে – মাল আনছস লগে ?

নুলা জামা উঠিয়ে দেখায়, সাথে আছে। সে বুঝেছে পিস্টন কি করতে যাচ্ছে। কাউঠাও আছে সাথে। ওর কোমরেও একটা মাল আছে। নুলা টেবিলের নীচ দিয়ে পিস্টনের হাতে ধরিয়ে দিলো নাইন এম এম টা। সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে লম্বা পা ফেলে পিস্টন আজিমপুরের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো।

কেউ কিছু বুঝার আগেই ওদের মাঝখানে বসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে – তুই রাসুকে গুলি করেছিলি, তাই না ! তাইলে এবার মর, শালা।
বলে ওর বুক লক্ষ করে তিন রাউন্ড গুলি করলো। পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলি খেয়ে ছিটকে পড়ে জবাই করা গরুর মতো গোঙ্গাতে শুরু করলো ছেলেটা। সাথের সঙ্গীরা উঠে খিঁচে দৌড় দিলো বাইরে।

পিস্টন,মালটা নুলার হাতে দিলো। তারপর যেন কিছু হয় নাই এমন নির্বিকারভাবে তিনজন একসাথে বেরিয়ে গেলো মধুর ক্যান্টিন থেকে।