এ বিজয় কার
![এ বিজয় কার](https://www.muradhai.com/wp-content/uploads/2020/12/4B2C5385-8FC0-4358-B1DB-7B393DDB106A.jpeg)
বিজয় এর স্বাদ ভালবাসি। উপভোগ করি।
বিজয়ের মাস এলে দেশপ্রেমের বন্যা বয়ে দেই ফেসবুকের পাতায়। তারপর আবার যেই লাউ সেই কদু। অনেক সাধনা আর কষ্টের কোন প্রাপ্তি মহা মুল্যবান মনে হয়। তাই সযতনে লুকিয়ে রাখে সেটা সবাই। নিজে অর্জন না করে অন্যের দেয়া কিছু কিন্তু কখনো নিজের মনে হয় না। মমতা জাগেনা।
প্রবাসে কত দেশের মানুষ দেখি। দেখি মানুষের তার জন্মভুমির প্রতি আন্তরিক ভালবাসা। যার যার দেশের জাতীয় দিবসে যখন এই শহরের বড় রাস্তায় নিজস্ব কালচারাল ড্রেস পরে মানুষ প্যারেড করে, নিজের জাতীয় সঙ্গীত গায় তখন দেখি ওদের চোখে মুখে আনন্দের ছটা। নিজের দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় সারা শহরে বিজয়ীর বেশে। অমন মানুষগুলি নিজের দেশের মানুষের সাথে নিজের মাতৃভাষা ছাড়া কথা বলেনা। নিজের দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি সমুন্নত রাখে।
ওদের দেশপ্রেম দেখে আমার বুক ভারী হয়ে যায় নিজের দেশের কথা ভেবে।
বন্ধুরা বলে, আমার লেখায় শুধু নেতিবাচক কথা থাকে দেশ নিয়ে। কিন্তু ইতিবাচক কেমন করে লিখব যদি কিছু নমুনা না দেখি ?
ক্ষনস্থায়ী কোন কিছুই ভাল না। আস্থা আসেনা। ভক্তি জমেনা।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় অনেক দেশ স্বাধীনতার জন্য, অধিকার আদায়ের জন্য যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম করে গেছে, রক্ত ঝরিয়েছে, অকাতরে প্রান দিয়েছে।
অনেক ত্যাগের পর কিছু পেলে তার মর্যাদা অনেক বেশি থাকে।
ছবি তুলেছেঃ শিরিন কনা
আমাদের দেশের মানুষ এর সাথে পৃথিবীর অন্য কোন দেশের মানুষের মিল খুজে পাওয়া যাবেনা। প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটা বিশাল অংশ আমাদের ভাষায় কথা বল্লেও আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্টের সাথে ওদের কোন মিল খুজে পাওয়া যায়না।
নিজের ভিটায় অন্যের মাতবরি কার ভাল লাগে?
জোর করে অন্য ভাষায় কথা বলা, চাপিয়ে দেয়া বোঝা, নিজের ভুমিতে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হয়ে থাকার চেয়ে না থাকাই শ্রেয়। এই অনুভুতি দেশের সাত কোটি বাঙ্গালীর মনে না থাকলেও অধিকাংশের মনে ছিল। তাই হয়ত হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার ডাকে মানুষ চোখ বন্ধ করে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ার মত অনেকটা খালি হাতে যুদ্ধে চলে গিয়েছিল।
আবার অনেক মানুষ যুদ্ধে না গিয়ে লুকিয়ে ছিল কাপুরুষের মত। অনেকে আবার বাঙ্গালী হয়েও যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। তাই মনে রাখতে হবে বয়স থাকা সত্বেও মাতৃভুমির মুক্তির জন্য জাতির একটা বৃহৎ অংশ যুদ্ধে যায় নাই। আরেকটা বৃহৎ অংশ দেশের টানে যুদ্ধে না গিয়ে সীমান্তের ওপারে গিয়ে বসে বিসে দাদাগিরি করে, দেশ স্বাধীন হবার পর এরাই দেশের ধারক বাহক হয়ে গিয়েছিল।
একটা কথা আবারও বলি। নিজে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ না করলে, রক্ত, মৃত্যু না দেখলে যুদ্ধ জয় হয়না। হ্যাঁ আমি জানি, ছবি হিট করলে পরিচালক সব ক্রেডিট পেয়ে যায়। কিন্তু অভিনেতারা ভাল অভিনয় না করলে অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক ভারী হলেও সেই পরিচালক হারিয়ে যায় মানুষের মন থেকে। খেলায় জিততেও কোচের চেয়ে মাঠের খেলোয়াড়দের পারদর্শিতাই আসল। খেলোয়াড় খেলায় ফাঁকি দিলে, কিংবা পাতানো খেলা খেল্লে চ্যাম্পিয়ন কোচ কেমন করে যাদু দেখাবে, বলুন!
২৫শে মার্চের রাতে পাকবাহিনীর আক্রমনের জবাবে কারো হুকুমের তোয়াক্কা করে নাই আমাদের বাঙ্গালী পুলিশ, আনসার, ই,পি,আর, আর সেনাবাহিনীর জোয়ানরা। ওরা ঠিক পালটা আক্রমন করতে দেরী করে নাই। কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মেডাল পরানোর মত করে যুদ্ধ ঘোষনা না করলেও এই যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সেই হাবিলদারের পুলিশ ট্রান্সমিটারে রাজারবাগে পাক বাহিনীর আক্রমনের খবর সারা দেশের পুলিশরা শুনেছিল। সেনাবাহিনীর মেজর জিয়ার ঘোষনা সারা দেশের মানুষ শুনেছিল। কেন কার নির্দেশে মেজর জিয়া এই ঘোষনা দিয়েছিল সেটা এখন রাজনিতীর খেলার গুটি হতে পারে। কিন্তু তখন এই ঘোষনা না হলেও যুদ্ধ অব্যাহত থাকত। কারণ তীর তখন ধনুক ছেড়ে বের হয়ে গেছে, তাকে ফেরানোর কোন উপায় ছিল না। বরং সেনাবাহনীর একজনের গলায় এই ঘোষনা শুনে মানুষের উদ্দীপনা অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছিল, কোন সন্দেহ নাই। মূল কথা হলো, গুলির জবাবে গুলি ছোড়া, এটাই একজন ট্রেইন্ড সৈনিকের ট্রেইনিং। নিজের গায়ের দিকে গুলি আসলে সৈনিক পালটা গুলি করবে। সেই গু্লি করার জন্য সৈনিক কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষনার অপেক্ষা করে না। এটা বোঝার জন্য নিশ্চয়ই রকেট সাইন্টিস্ট হতে হয় না।
সাধারন মানুষ মায়ের বুক ছেড়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিল মাতৃভুমির মুক্তির জন্য ।
সেই সাধারন মানুষগুলি সবাই কোন দলের সক্রিয় সদস্য ছিল না। তারা সবাই ছিল সাধারন মানুষ। তারা মুক্তিযোদ্ধা। তারা সবাই দেশের একজন নেতাকেই মানতো। এই মানা ছিল ভক্তি, ভালবাসরা। সেখানে কেউ কোন দলের হয়ে যুদ্ধে যাওয়ার কোন ব্যাপার ছিল না, বরং দেশের হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল। যাদের ইজ্জত লুন্ঠিত হয়েছে তারাও কেউ কোন দলের নয়, দেশের সাধারন মা বোন। মা বোনদের ইজ্জত লুন্ঠনে সহায়তা করেছিল দেশের যুদ্ধের বিরুদ্ধে থাকা বাঙ্গালী নামের একদল কলঙ্কিত মানুষ। অবাক কান্ড, এই কলংকিত মানুষদের দল এখনো আমাদের দেশে আরাম আয়েসে দিন যাপন করছে। আবার আমরা অনেকে এদের পক্ষে কথা বলি। যারা দেশের জন্য যুদ্ধে গিয়েছিল, তারা জীবন বাজি রেখে গিয়েছিল। তাদের অনেকে শহীদ হয়েছে, অনেকে পঙ্গু হয়ে ফিরে এসেছে, অনেকে চিরতরে না ফেরার দেশে চলে গেছে।
একবার সব কিছুর উর্ধে গিয়ে নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করুন – যাদের অসীম সাহসিকতার কারনে, জীবনের বিনিময়ে, ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা আমাদের এই স্বাধীন ভুমিতে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে কথা বলি, নিঃশ্বাস নেই, তাদের কথা আমরা কতটুকু মনে রাখি? তারা তো কিছু পাবার জন্য যুদ্ধে যায় নাই। গিয়েছিল যেন আমরা নিরাপদে নিজের ঘরে ঘুমাতে পারি। তবে কেন শুধু বিজয় দিবস আর স্বাধীনতা দিবস এলে আমাদের ওদের কথা মনে হয়? তখন ওদের টেলিভিষনের পর্দায় এনে ওদের দুঃখের কাহিনী শুনি। তারপর আবার ভুলে যাই। ব্যস্ত হয়ে পড়ি দলাদলির যুদ্ধে।
যুদ্ধে যাবার বয়স হয় নাই তখন আমার। কিন্তু যতটুকু দেখেছি নিজের কিশোর বয়সে, যতটুকু ইতিহাস পড়ে জেনেছি – তাতে আমার কাছে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের রুপকথার নায়কদের মত মনে হয়। যেনো আলাদিনের প্রদীপ হাতে নিয়ে ওরা যুদ্ধে গিয়েছিল। নইলে কেমন করে আমরা এই স্বাধীনিতা পেলাম ? আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কোন আধুনিক অস্ত্র ছাড়া, দীর্ঘ এবং সুচারু যুদ্ধের ট্রেইনিং ছাড়াই হাইলি ট্রেইন্ড আধুনিক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়েছিল। শুধুমাত্র উপস্থিত বুদ্ধি আর দেশেপ্রেমের বন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে এসব বীর যোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিল।
টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর গল্প শুনলে আমার কাছে সব কিছু রুপকথার মত মনে হয়। ভারতে না গিয়ে, কোন প্রপার ওয়ার ট্রেইনিং ছাড়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজের এলাকায় বহু মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্ঘঠিত করে যুদ্ধ করে সবার আগে নিজের এলাকা ‘টাঙ্গাইল’ শত্রুমুক্ত করে ফেলেন। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ এতই সংকীর্ন মনের মানুষ যে রাজনৈতিক দলের পা চাটতে গিয়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বলার দু;সাহস দেখিয়ে ফেলে। এই দুঃসাহসিক মানুষগুলি এত সংগ্রাম করে আমাদের জন্য এই ভুমি এনে দিলো যেনো আমরা এখন ওদের ত্যাগের কথা ভুলে গিয়ে চর দখলের মত ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াতে পারি নির্বিবাদে।
দেশ তো মায়ের মত। মা যেমন আঁচলে ঢেকে রেখে দুধ কলা খাইয়ে, নিজে আধপেটা থেকেও সন্তান মানুষ করে, তেমনি দেশ ছায়া দিয়ে আদর মমতায় শিক্ষাদীক্ষা দিয়ে পেলেপুষে আমাদের বড় করে, সুনাগরিক বানিয়ে দেশের সেবা করার জন্য। কিন্তু আমরা মায়ের দুধের সাথে বেঈমানি করে বড় হয়ে মাকে যেমন ভুলে যাই, বুড়ি মাকে বোঝা মনে করে এডাল্ট হোমে পাঠিয়ে দেই, তেমনি আমাদের জন্য দেশের উৎসর্গের কথা ভুলে গিয়ে দেশের সেবা না করে ব্যাক্তির সেবা করি শুধু নিজের স্বার্থের কথা ভেবে। খুবলে খুবলে খেয়ে ফেলতে চাই দেশের নাড়িভুড়ি। তবুও প্রাণ ভরেনা। তাই কংকালসার দেশের হাড্ডিও বিক্রি করে দিতে চাই প্রতিবেশি দেশের কাছে।
এটাই কি স্বাধীনতার অর্থ ?
আমাদের দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাস যুদ্ধ করে ফেলেছে তখন। তখনও বহির্বিশ্বের কেউ আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে নাই। প্রতিবেশি দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়া আমাদের দেশের লাখো শরনার্থীকে ওরা আশ্রয় দিয়েছে, খেতে দিয়েছে। এজন্য আমরা ওদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেইনিং দিয়েছে, আমরা তার জন্যও কৃতজ্ঞ। যুদ্ধের নয় মাস কেটে যাবার পর, আমাদের অনেক মানুষ যুদ্ধে প্রান দেবার পর ভারত আমাদের পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে জড়ায়। পাকিস্তান ও ভারত উপমহাদেশ ভাগাভাগির সময় থেকেই পরস্পরের মহা শত্রু। একাধিক যুদ্ধের ঘটনা আগেই ঘটে গেছে এই দুই দেশের ভিতর। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরেকবার সহজ যুদ্ধ জয়ের সুযোগ ওরা নিবে এটা খুব সাধারন বুদ্ধিতে ভেবে নেয়া যায়। কিন্তু আমরা তো আর অকৃতজ্ঞ হতে পারিনা। তাই ওদের সহায়তায় আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে এটা স্বীকার করতেই হবে।
আমরা আমাদের সাহয্য করার জন্য ওদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
এই কথাগুলি সবার মনে রাখতে হবে। সুপার পাওয়ার আমেরিকা ভিয়েতনাম আক্রমন করে দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালিয়েও ওদের পরাস্ত করতে পারে নাই। বরং এক পর্যায়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। রাশিয়া আফগানিস্তান আক্রমণ করেও শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল।
বাংলাদেশের যুদ্ধ নয় মাসে শেষ হয়েছিল ভারতের হস্তক্ষেপের কারনে। তাতে হয়ত আমাদের হতাহতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হওয়া থেকে আমরা বেঁচেছি। কিন্তু জাতিগত ভাবে মস্ত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমাদের যুদ্ধ আমাদের নিজেদের একা করা উচিত ছিল। সেই যুদ্ধ হয়ত নয় মাসের যায়গায় নয় বছর লেগে যেতো। ত্রিশ লক্ষ শহীদের বদলে হয়ত তিন কোটি শহীদ হয়ে যেতো। তখন দেখা যেতো বাংলার প্রত্যেক ঘরে একজন দুইজন মুক্তিযোদ্ধা সদস্য, প্রত্যেক ঘরে এক দুইজন শহীদ হতো। এত সময়, এত বড় ত্যাগের পর তখন যে স্বাধীনতা আসতো, প্রতিটি মানুষ তাকে সযতনে হৃদয়ে অনেক সন্মানের সাথে লালন করতো। আজকের মত এত ভন্ডামি করতো না।
ভারতের সহায়তায় তড়িঘড়ি করে পাওয়া স্বাধীনতা আমাদের অনেক মানুষের মনের গহীণে সন্মানের আসন গড়তে পারে নাই। তাইতো আমরা দেশ নিয়ে হলি খেলি। রঙ তামাশা করি। ক্ষমতা দখল করার নাটক করি। মানুষের অধিকার কেড়ে নেই। দলের বিরুদ্ধে কথা বললে গ্রেফতার হয়ে যাই। দেশ স্বাধীন হবার পর পরই স্বাধীন দেশের মানুষ সব তাদের মৌলিক অধিকার হারিয়ে ফেলে।
এই দেশের মানুষ মন থেকে কখনোই দেশকে ভালবাসে নাই, যুগে যুগে ভালবেসেছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তিকে।
দেশের পুজা না করে ব্যাক্তির পুজা করে যাচ্ছে। দেশের ভীত নড়বড়ে করে ফেলছে। নিজের দেশে অন্য দেশের ইন্টারফিয়ারেন্স হয়। ভারত যুদ্ধকালীণ সময়ে আমাদের অনেক উপকার করেছে, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তার মানে এই নয় যে আমদেরকে সারা জীবন ওদের গোলামী করতে হবে। ওরা চাইলেই বর্ডারে আমাদের মানুষ মেরে ঝুলিয়ে রাখবে, এ কেমন বন্ধুত্ব ? ভারত কি কোন দিন পারবে পাকিস্তান কিংবা চায়নার বর্ডারে এমন কিছু করতে ? অথচ সব অন্যায় আমরা নীরবে সয়ে যাই।
ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে ভারতের কাছে বাংলাদেশ হল একটা ছোট পুকুর ভর্তি মাছের মত। এই পুকুরে যাই খাওয়ানো হবে তাই খাবে, কারন অনেক মাছের অনেক আধার লাগে। ভারত বাংলাদেশকে তার পন্যের অনেক বড় একটা বাজার ছাড়া আর কিছুই ভাবেনা।
দেশকে ভালবাসেনা বলে মানুষ দেশের মানুষকেও ভালবাসেনা। দেশে তার নমুনা আমরা অহরহ দেখি। যে যেমন সুযোগ পায়, দ্বিতীয় চিন্তা না করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ফেলে। ভালবাসেনা বলে ক্ষমতাসীনরা সব সময় দেশের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করে। ভালবাসেনা বলে সারাক্ষন অন্যের দোষারোপের রাজনীতি করে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণের ভোট প্রয়োগে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা কেউ ভাবতে চায় না।
বিদেশে থাকার সুবাদে অনেক দেশের অনেক জাতের মানুষের কাছাকাছি যাবার সুযোগ হয়েছে। সব মানুষ নিজের মাতৃভাষার বাইরে ইংলিশ ব্যবহার করে প্রয়োজনে। কিন্তু দরকার না হলে কখনো নিজের ভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় কথা বলে না। শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষেরা নিজের দেশের মানুষের সাথে ইংরেজি বলার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয়, দেশের টেলিভিষনের চ্যানেলে অনুষ্ঠান পরিচালিকা/অতিথি সবাই আলোচনায় বেশির ভাগ সময়ে ইংরাজি শব্দ ব্যবহার করে। ইংরেজি বাক্য বলে। এটার কারন হলো, বাংলা নয় – ইংরাজী হলো আমাদের দেশের মানুষের কাছে আভিজাত্যের নমুনা। আভিজাতেয়র সেই নমুনা নিজের ঘরে গিয়ে করলে কারো কিছু বলার নাই। কিন্তু টেলিভিষনে এমন করলে সেটা খুব দৃষ্টিকটূ লাগে, দেশের মাতৃভাষার অবমাননা হয়। দেশপ্রেমের অভাব প্রমানিত হয়।
দ্রুত দেশ স্বাধীন হবার ফলে দেশ বিরোধী শত্রুদের বেশিদিন লুকিয়ে থাকতে হয় নাই। দেশের ভিতর নিজেদের অর্থনীতির শক্ত ভীত তৈরি করে নিয়ে দেশের অপছন্দের রাজনিতি শুরু করে। যারা নিজ হাতে বাংগালীদের হত্যা করেছে সেই মানুষদের প্রতি আমাদের অনেকের সহানুভুতি দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। অনেক সময় খুব কাছের মানুষদের ভিতর এমন মনোভাব দেখি। এই দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার প্রতি এত অশ্রদ্ধাশীল যে গোলাম আযমের মৃতদেহ পৃথিবীর অন্য দেশের মত রাষ্ট্রের তত্বাবধানে অজ্ঞাতস্থানে কবর না দিয়ে উলটা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় জাতীয় মসজিদে জানাজা পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এ যেন শহীদ পরিবারগুলির প্রতি সরাসরি অবমাননা।
দেশের রাজনীতিবিদরা শুরু থেকেই নিজেদের স্বার্থে সব সময়ে রাজাকারদের ক্ষমতায় বসিয়েছে।
রাজনীতি এখন তার সকল মুল চরিত্র হারিয়েছে। ওদের দায়িত্ব এখন দেশের মানুষের ভোটে জয়ী হয়ে জনগনের সেবা নয়, বরং ভোট ছাড়া ক্ষমতা নিয়ে শুধু নিজেদের সেবা করাই রাজনীতির মূল লক্ষ।
রাজনীতি এখন দেশের নীতি নির্ধারন আর সরকারের ভুলের প্রতিবাদ করার জন্য নয়। বরং শিষ্টাচার বহির্ভুতভাবে প্রতি বক্তব্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু অন্যকে দোষারোপ এবং নিজেদের গুনগান গাইতে গাইতে শেষ হয়। যখন দেশের উঁচু পর্যায়ের নীতি নির্ধারকেরা চুরির দায়ে চাকুরিচ্যুত হয়েও মুখ বন্ধ করে না, বিদেশি কুটনিতীবিদকে নিজের প্রয়োজনে পা চাটা, প্রয়োজন ফুরালে ‘দুই পয়সা’র মানুষ বলে অবিহিত করে, যুদ্ধে জয়ী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার অবদানকে খাটো করে তাকে ‘তিনশো টাকার মেজর’ বলে ডাকে তখন এইসব মানুষগুলির দেশপ্রেমের নমুনা বুঝা যায়।
যত সময় পার হবে, তত দেশ উন্নত হবার কথা। কিন্তু আমাদের দেশ অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাচ্ছে। এত বছরেও দেশের ব্যাক-বোন বলে অবিহিত প্রাথমিক প্রতিষ্ঠানগুলি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পায় নাই। সরকারের ইচ্ছার বলি হয়ে থাকে এমন সব প্রতিষ্ঠান।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। অথচ দেশের সর্বক্ষেত্রে অহরহ প্রশ্নপত্র পরিক্ষার আগে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এত বড় অনর্থের ঘটনার পরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী তার পদে বহাল থাকে।
এবার বুঝুন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাঙ্গালী যে স্বাধীনতা পেয়েছে রাজনীতিবিদরা সেই স্বাধীনতার কেমন মর্যাদা রাখছে?
দেশের মানুষ এসব অনর্থের কতটা প্রতিবাদ করছে, করতে পারতেছে?
তাই বলি, আসোলে এই বিজয় কার জন্য ?
১লা ডিসেম্বর, ২০১৪
Bijoy Krishna Roy
বরাবরের মত সত্য কথাগুলোই সাবলীল ভঙ্গিতে প্রকাশিত। চলমান পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম গুলোও দেশপ্রেম থেকে অনেকটা দুরে। বড় অংশ নব্য রাজাকার ঘেসা।