লাস্সি

বিশ একুশ বছর বয়সে গিয়েছিলাম একবার। তখন কেনাকাটা দূরের কথা, পয়সার অভাবে ভাল কোন রেস্তোরাঁতেও ঢুকি নাই। তাই কলকাতা শহরের সব কিছু অচেনা আমার। বন্ধু জাকির প্রায় বেড়াতে যায়। শহরের কোথায় কি আছে সব তার নখদর্পনে। বিখ্যাত সব স্থান পরিদর্শন ছাড়াও সে আমাকে শহরের সব ভাল খাবারের দোকানে নিয়ে গেলো। প্রাণ ভরে মজার খাবার খেলাম। অনেক ফল কিনে খেলাম রাস্তার ফল বিক্রেতার কাছ থেকে। আমার মন খুঁতখুঁত করছিল ওসবে ফরমালিন দেয়া আছে কিনা সেই ভয়ে। পরে জানলাম ওরা আর যাই করুক, খাবার জিনিস নিয়ে হাঙ্কি পাঙ্কি করে না। জেনে আশ্বস্ত হলাম।

শেফালীর জন্য শাড়ি কিনতে হবে। নিউমার্কেট ছাড়া আর কিছু চিনি না আমি। জাকির পার্ক স্ট্রিটের বিখ্যাত শাড়ির দোকান রাঙ্গোলীতে নিয়ে গেলো আমাকে। বিশাল দোকান। বিশাল তাদের কালেকশন। প্রচুর বেচাকেনা হয়। ভাল লেগেছে ওদের সেলসম্যানদের বন্ধু বৎসল এবং করিৎকর্মা আচরণ দেখে। একটুও বিরক্ত না হয়ে কত যে শাড়ি খুলে দেখালো গায়ের উপর মেলে ধরে।

অনেক আগের কথা। বাবার সাথে বায়তুল মোকাররমের দোকানপাটে শপিং করতে গেলে দোকানীরা লাস্সি খেতে দিতো। সেই লাস্সি খেতে আমার খুব ভাল লাগতো। এরপর যেতাম শান্তিবাগের খালাম্মার সাথে শাড়ির দোকানে। উনি শ’য়ে শ’য়ে শাড়ি খুলে দেখতেন ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নিয়ে। কখনো কিনতেন, আবার কখনো ‘শাড়ির জমিন ভালো না’ বলে কিছু না কিনে নির্বিকারভাবে বেরিয়ে আসতেন। না কিনলে তখন আমার ভীষণ লজ্জা লাগতো। কারণ অনেকক্ষন ধরে শাড়ির দোকানে অবস্থান করায় বিশাল বিক্রির আশায় ওরা লাস্সি, কফি, কেইক এসব এনে খাওয়াতো। খালাম্মার মুখ ভর্তি পান থাকতো। তিনি কিছু না খেয়ে সব আমাকে খেতে বলতো। আমিও খুশি মনে সব গলাধঃকরণ করতাম।

এবার যখন পার্ক স্ট্রিটের শাড়ির দোকানে বসে নিজে শাড়ি খুজছিলাম শেফালীর জন্য, হঠাৎ কানে এলো প্রবীণ সেলসম্যান জিজ্ঞেস করছে – দাদা বলুন, চা কফি কি খাবেন। আনাই। সাথে ভাল চাট খাওয়াবো।

শুনে মনের অজান্তে হাসি চলে এলো। মনে পড়লো খালাম্মার সাথে শাড়ির দোকানে লাস্সি খাওয়ার কথা। ঝট করে বললাম – যদি কিছু খাওয়াতে চান, তাইলে মজার লাস্সি থাকলে খাওয়াতে পারেন। চা কফি কিছু খাবো না।

বলে – অবশ্যই খাওয়াবো। ভাল লাস্সি আছে। এখুনি আনাচ্ছি।

লাস্সি এলো। টিস্যু দিয়ে মোড়ানো মাটির মগে করে। এভাবে আগে কখনো খাই নাই। খেয়েছি কাঁচের চিকন লম্বা গ্লাসে করে। মাটির মগে স্ট্র দিয়ে অসাধারণ স্বাদের লাস্সি খেয়ে সেদিন সত্যি খুব ভাল লেগেছিলো।

একবার বলতে ইচ্ছা করেছিল – দাদা, আরেক মগ খাওয়াবেন নাকি ! বেশী বেশী হয়ে যায় তাই আর সে কথা বলা হয় নাই। 😁

৪ঠা ডিসেম্বর ২০১৯