গ্রীনকার্ড

১.

দাওয়াত খেতে তো ভালই লাগে। মুফতে ভাল খাবার খাওয়া যায়। বাসার এক রকম রান্না আর কত ভাল লাগে ! প্রবাসের ব্যাচেলর জীবনের গল্প। যারা দাওয়াত খাওয়াতো, ওরাও ব্যাচেলর। তাদের ভিতর কেউ কেউ দারুন রান্না জানত।

আর দাওয়াত দেয়ার মূল উপলক্ষ থাকত ‘গ্রীনকার্ড’ পাওয়া।

গ্রীনকার্ড পাওয়া মানে আলাদিনের চেরাগ পাওয়া যেন। যখন কেউ ফোন করে তার খুশির খবরটা জানাত – শুনে হিংসায় মন বিষিয়ে যেত। দাওয়াত দিত সেলিব্রেট করতে। পেট ভরে খেতাম। মুখে হাসির ভাব দেখালেও মনের ভিতর হিংসার আগুন দাউ দাউ জ্বলত। শুধু আমার একার না। যাদের এই গ্রীনকার্ড ছিল না, তাদের সবার।

আমি, মাশুক, শওকত এক বাসায় থাকতাম। ওরা আমার আগে এসেছে, সাতাশিতে। তাই ‘খেত’এর কাগজ (কৃষি শ্রমিক) দিয়ে এপ্লাই করার সুযোগ পেয়েছে। খেত এর কাগজে কেউ কেউ একদিনও খেতখামারে কাজ না করে কোন ঝামেলা ছাড়া গ্রীনকার্ড পেয়ে গেছে। আবার অনেকে আজীবন ঝুলে থেকেও পায় নাই। মরিচিকার মত। মনে হচ্ছিল এই বুঝি পেয়ে যাবে। কিন্তু হয় নাই। কষ্টের আয়ের পয়সা সব প্যাঁচ খেলতে ওস্তাদ উকিল ব্যাটাই খেলো।

এর ভিতর হঠাৎ একদিন শওকতের গ্রীনকার্ডের চিঠি এল। বড় সুখবর। নিজেদের হাউজ মেইট। খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু হই নাই। আমার আর মাশুকের মুখ কালো হয়ে গেল দু:খে। হায়রে কপাল ! আমরা ঢাকায় বড় হলাম, ঢাবি’তে পড়লাম। রাজা উজির মারলাম। ইংরাজি বলতে পারি। এত সেয়ানা। অথচ আমাদের কাগজ না হয়ে হল কিনা বরিশাল থেকে সরাসরি আমেরিকায় আসা শওকতের।

আমরা খুশি হই কেমন করে !

যদিও আমি শওকতকে একটু লাইক করতাম। গ্রামের ছেলে। মাথায় যত কুট বুদ্ধির বাসা। এয়ারপোর্ট এ নেমে প্রথম দিন আমি ওদের বাসায় এসে উঠেছিলাম। সেদিন ছেলেটা আমাকে আট পিস পাউরুটি, চারটা ডিমপোচ, বড় এক গ্লাস অরেঞ্জ জ্যুস খেতে দিয়েছিল। মনে হয়েছিল এত মজার পাউরুটি যেন জীবনে প্রথম খেলাম। আর অরেঞ্জ (Tropicana) জ্যুস এর কথা কি বলব ! এক গ্লাস খাওয়ার পর মনে হয়েছিল বেহেশতে গেলেও এমন মজার সুধা পাওয়া যাবে না।

ওদের সাথে এক বাসায় থাকতে শুরু করার প্রথম দিনই মাশুক আমাকে বলে সাবধান করে দিয়েছিল। আমি যেন শওকতকে বেশি লাই না দেই। হাল্কা ঝাড়ির উপর যেন রাখি ফুট ফরমাশ দিয়ে। যথারীতি তা’ই করতাম। রান্না বান্না সে’ই করত। আমরা তখনো ওসব পারতাম না। থালা বাটি ধুয়ে দিতাম। মাশুকের দায়িত্ব ছিল ছুটির দিনে টয়লেট ক্লিন করা। রান্নার জন্য বাজার করা এবং হিসাব রাখার দায়িত্ব শওকতের ছিল। মাস শেষে মাশুক হিসাব অডিট করে সন্তষ্ট হলে যে যার পাওনা টাকা দিয়ে দিতাম। বাজার করার কাজে শওকত একটু হাল্কা আপত্তি জানালেও মনে মনে খুশীই ছিল। ইচ্ছামত খরচের হিসাব লিখত যার আগা মাথা আমরা কিছু বুঝতাম না। নিজেরা বাজারে না গেলে জিনিসপত্রের দাম জানব কি করে !

সেই শওকত একদিন রাস্তায় মার খেয়ে বাসায় ফিরলো। কালোরা পিটিয়ে চেহারা একদম আলুর দম বানিয়ে দিয়েছে। বাসায় এসে আমাদেরকে পেয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে দিল। মায়া লেগেছে কিন্তু তার চাইতে খুশি হয়েছি বেশি।

গ্রীনকার্ড পেয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলেছে। গভীর রাতে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে রাস্তার ধারে ব্যাংকের এ,টি,এম মেশিনে দাঁড়িয়ে ব্যালেন্স চেক করে। ওকে ফলো করে কালোরা একদিন ধরে ফেলল। ওরা কাউকে ধরে প্রথমে খুব মারধোর করে ভয় পাইয়ে দেয়। তারপর ছুরি বা পিস্তল দেখিয়ে মেশিন থেকে যত বেশি সম্ভব টাকা উঠিয়ে নেয়। সেটাই করেছে সেদিন। একবারে পাঁচশ’ ডলার উঠানো যেত। উঠিয়ে নিয়ে গেছে বেচারার এক সপ্তাহের অনেক পরিশ্রম করে আয় করা টাকা।

ওর প্রতি রাগ, হিংসার কারন ছিল কাগজ পেয়ে ওর দেমাগ বেড়ে যাওয়া দেখে। আর কিছু না। সেই সময়ে জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউতে থাকতাম আমরা। খুব অল্প ক’জন বাংগালি ছিল তখন। স্টুডেন্ট ভিসায় আসা প্রায় সবাই। এসে আর স্টুডেন্ট থাকতে পারে নাই পয়সার অভাবে। তাই পেট বাঁচাতে সকাল সন্ধ্যা কাজে যেতে হত মিনিমাম বেতনের।

২.

জ্যামাইকায় তখন বেশীরভাগ মানুষ ছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলি থেকে আসা কালা আদমিরা। দেখে বুঝতাম না। চেহারা দেখে আলাদা করতে সময় লেগেছে কারা আমাদের মত অন্য দেশ থেকে আসা, আর কারা লোকাল কাল্লু। তবে আমাদের চেহারা দেখে ওরা ঠিক বুঝত যে আমরা ইন্ডিয়ান (বাংলাদেশ তখনো ভালভাবে চেনে নাই)। তাই আমাদের বেকায়দায় পেলে সবাই চেষ্টা করত ‘ঠেক'(ছিনতাই) দিতে। শুধু এই কারনে আমি রাতে বাসায় ফেরার সময় একটা বিশ ডলারের নোট রাখতাম পকেটে। আর কিছু না। যেন ধরলে মার খাওয়ার আগেই বের করে দিতে পারি।

কয়দিন হল, জ্যামাইকায় নতুন মুখের দেশী মানুষ দেখতে পাচ্ছি। বুঝা যায় এরা স্টুডেন্ট ভিসায় আসা মানুষ না কেউ। ভাবলাম তাহলে হয়ত সিটিজেন বাংগালীদের আত্মীয় কোটায় আসা কেউ হবে। ছুটির দিন আমাদের বাসায় লাগাতার আড্ডা চলত। বিভিন্ন এলাকায় থাকা বন্ধুরা আসত। সবাই ব্যাচেলর। হাতপা ঝাড়া। শুক্রবার রাতে এসে শনিবার কাটিয়ে রবিবার রাতে আড্ডা ভাংগত। কেউ কেউ আবার রবিবার রাত কাটিয়ে সোমবারে কাজে চলে যেত এখান থেকে।

আড্ডাতেই জানলাম ‘ওপি ওয়ান’ নামে নাকি নতুন ইমিগ্র‍্যান্ট ভিসা লটারি দিয়েছে। বাংলাদেশেও অনেকে এই লটারি জিতেছে। ওরাই আসছে এখন। আচ্ছা এই ব্যাপার ! এতক্ষনে বুঝলাম নতুন দেখা মানুষেরা কারা। নিজেদের জন্য কত প্রয়োজন ছিল অথচ এই লটারির খবর জানতেও পারি নাই। যারা কোন কাঠ খড় না পুড়িয়ে শুধু একটা এপ্লিকেশন জমা দিয়ে গ্রীনকার্ড জিতে নিল, তাদের প্রতি আবার ভীষন হিংসা জাগল মনে।

মনে মনে বল্লাম – “আমেরিকার সরকার আসোলেই বেকুব। আমাদের মত লক্ষ লক্ষ কাগজ ছাড়া মানুষ এই দেশে নামমাত্র বেতনে কাজ করে যাচ্ছে গাধার মত। তাদের কথা না ভেবে গ্রীনকার্ড হাতে দিয়ে নতুন অনভিজ্ঞ মানুষ এনে দেশ ভরে ফেলছে।”

আপন মনের প্যান প্যানানি তো আর কারো কানে পৌঁছায় না। তবুও গ্রীনকার্ড হাতে নিয়ে নতুন চালানে আসা মানুষগুলিকে আমরা একদম সহজভাবে নিতে পারলাম না।
একদিন কাজে যাওয়ার জন্য হিলসাইডের সাবওয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষা করছিলাম আমি আর মাশুক। একে তো শীতকাল তার উপর বরফ পড়ে সব কিছু ডিপ ফ্রিজের মত জমে আছে। এই সময় মাঝ বয়সী এক মানুষ এগিয়ে এল আমাদের দিকে। এই হাঁড় কাঁপানো শীতের ভিতর পাতলা পায়জামা পাঞ্জাবি, তার উপর হাতা কাটা পাতলা শোয়েটার পরা। পায়ে মোজা ছাড়া ফিতা ওয়ালা স্যান্ডাল পরা। দেখে বুঝলাম দেশ থেকে নতুন এসেছে।

কাছে এসে বলে – ভাই সিটি হলে যেতে কোন ট্রেইন নিতে হবে ?
মাশুক বলে – ওখানে কি কাজ আপনার, বলেন শুনি।

তিনি তখন খুব ভাব নিয়ে বলেন – আমেরিকার সরকার আমাকে গ্রীনকার্ড দিয়ে এই দেশে এনেছে। আমার জন্য নাকি ভাল চাকুরির ব্যবস্থাও রেখেছে। আমাকে শুধু সিটি হলে গিয়ে মেয়রের সাথে দেখা করতে হবে। তাহলেই সব কষ্ট শেষ।

ওনার কথা শুনে আমি আর মাশুক মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম। পেট ফেটে হাসি আসল। কিন্তু হাসি চেপে রাখলাম। বুঝলাম উনি যে বাসায় উঠেছে, সেখানে কোন দুষ্ট মানুষ তাঁকে এমন বানানো গল্প বলে সিটি হলে যেতে বলেছে। আর তিনিও বোকার মত সেটা বিশ্বাস করে রওয়ানা দিয়েছেন। আগেই বলেছি গ্রীনকার্ড ওয়ালা মানুষ দেখলে বিরক্ত হই। হিংসা লাগে। তবুও লোকটার জন্য মায়া লাগল।

বললাম – মেয়রের সাথে দেখা হওয়ার আগেই তো আপনি মারা যাবেন শীতে। এই কাপড় পরে বের হলেন কেন ! যান, বাসায় ফিরে যান। মোটা কাপড়, জুতা মোজা পরে তারপর না হয় মেয়রের সাথে দেখা করতে যাবেন।

আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে উনি পাল্টা জিজ্ঞেস করে বসলেন – আচ্ছা, আপনাদের কি গ্রীনকার্ড আছে ?

এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কি উত্তর দিব ভাবছিলাম। তার আগেই মাশুক জবাব দিল – আমরা তো সিটিজেন হয়ে গেছি কবেই।

এবার তিনি সমীহের দৃষ্টিতে তাকালো আমাদের দিকে।

তারপর বলে – আচ্ছা, মেয়র নাকি যাদের ইনকাম নাই কিন্তু গ্রীনকার্ড আছে, তাদের জন্য বিনা ভাড়ায় বাসার ব্যবস্থাও করে দেয় ?

বললাম – হ্যাঁ দেয়। সব কিছু দিয়ে দিবে।

রাগের বশে ঠাট্টা করে এ কথা বললেও তখন আমরা নিজেরাও জানতাম না যে বৈধ ইমিগ্র‍্যান্ট, যারা কোন কারনে বেকার কিংবা স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের জন্য ওয়েলফেয়ার চেক (খাবার কেনার টাকা) এবং নামমাত্র ভাড়ায় বাসার ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশের অনেক মানুষ অন্যায়ভাবে মিথ্যা বয়ান দিয়ে এসব সুবিধা ভোগ করে।

৩.

একদিন কাজের জায়গায় মাশুক ফোন করল আমাকে। খুব উদ্ববিগ্ন হয়ে বলে – শোন, আজ বাসায় ফিরিস না। অন্য কারো বাসায় থেকে যা। ঝামেলা হয়ে গেছে।

ওর কথায় কিছু বুঝি নাই। কিন্তু ভয় পেলাম। তবুও জিজ্ঞেস করলাম – কি হইছে !

তখন সে খুলে যা বলল – শওকতের এক বন্ধু এসেছে ওপি ভিসা নিয়ে। সে সাবওয়ে ভাড়া না দিয়ে টপকে পার হতে গিয়ে সাদা পোষাকে পাহারায় থাকা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেছে। পড়েছে পড়ুক। অন্যায় করেছে, তার শাস্তি পাক। আমাদের কি ! গ্রীনকার্ড নিয়ে আসা মানুষদের এমনিতেই পছন্দ করি না। সমস্যা হল, ধরা পড়ে সে পুলিশের কাছে নিজের বাসার ঠিকানা না বলে মাশুকের নাম আর আমাদের ঠিকানা লিখে দিয়েছে। পুলিশ বাসায় ফোন করে কাউকে না পেয়ে বাড়িওয়ালাকে ফোন করেছে। বাড়িওয়ালা মাশুকের কাজের জায়গায় ফোন করে সব জানালো।

পুলিশকে তখন যমের মত ডরাতাম। খামোকাই। রাস্তায় পুলিশ দেখলে আমি উল্টা দিকে হাঁটা শুরু করতাম ভয়ে। অলীক ভয় ছিল – পুলিশ যদি আমাকে দাঁড় করিয়ে কাগজ দেখতে চায় আর বুঝে ফেলে আমি অবৈধ ভাবে আছি – তাহলে ধরে নির্ঘাত দেশে পাঠিয়ে দিবে। যদিও কার কাগজ আছে আর কার নাই, সেটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের নয় – শুধু ইমিগ্রেশন পুলিশের, এটা বুঝে সেই ভয় কাটতে অনেক সময় লেগেছে।

মাশুকের কাছে পুলিশ ফোন করেছে জেনে ভয়ে আমার পেট মোচড়াতে শুরু করল। ভয়ে কয়দিন আর বাসায় যেতে সাহস পাই নাই। এক কাপড়ে বন্ধুর বাসার সোফায় ঘুমিয়ে, সেখান থেকে গিয়ে কাজ করতাম।

৪.

আমেরিকা আসার অল্প কিছুদিন পর আমরা দল বেঁধে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে ডিজনীল্যান্ড দেখতে গেলাম। আমি, মাশুক, খোকন, সিরাজ ভাই। মায়ামী থেকে মিন্টু যোগ দিল আমাদের সাথে। ইনফ্যাক্ট, মিন্টুই ড্রাইভ করে আমাদের সব কিছু ঘুরিয়ে দেখালো।

মায়ামী, অরল্যান্ডোতে কদিন বেড়িয়ে, আনন্দে কাটিয়ে নিউইয়র্কে ফিরে আসার দিন এক ঘটনায় সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল। মিন্টু আমাদেরকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। ফোর্ট লডারডেল এয়ারপোর্টে চেক ইন করে আমরা প্লেনে উঠার অপেক্ষায় বসে গল্প করছিলাম। জাতিগত অভ্যাস হিসাবে আমাদের গল্প স্বভাবত: খুব উচ্চস্বরে হয়। কারো অসুবিধা হয় কিনা সেই বিবেচনা বোধ আমাদের ভিতর একদম কাজ করে না।

কেউ কমপ্লেইন করে নাই। কিন্তু আমাদের উচুঁ কন্ঠে বিজাতীয় ভাষায় হৈ হল্লা শুনে এক পুলিশ এগিয়ে এল।

এসে বলে – জেন্টেলম্যান, তোমরা কোথায় যাচ্ছ ?

জানালাম।

পুলিশ দেখে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। ঢোক গিলতে পারছিলাম না। তারপর সে সবার আইডেন্টিফিকেশন দেখতে চাইল। চাইতেই পারে। কারো কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। কারো আছে ওয়ার্ক পারমিট। কারো আছে খেতের কাগজে আবেদন করার নথি পত্র। আমার কাছে আছে শুধু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া দেশী পাসপোর্ট। এসবে পাত্তা না দিয়ে সে সবার গ্রীনকার্ড দেখতে চাইল। সেটা তখন কারোরই নাই।

পুলিশ বেটা আমাদের সবাইকে ওয়েটিং এরিয়া থেকে সরিয়ে আলাদা জায়গায় এনে বসালো। তারপর তার ওয়ারলেসে বর্ডার পেট্রল (ইমিগ্রেশন) পুলিশ ডাকলো। শুনে ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেল সবার। মনে মনে ভাবলাম – শেষ হয়ে গেল স্বাদের আমেরিকায় থাকা। এবার বস্তায় পুরে দেশে পাঠিয়ে দিবে। ভেবে খুব অপমান লাগছিল এই ভেবে যে, দেশে গিয়ে মুখ দেখাবো কেমন করে ?

অনেক সময় পার হয়ে গেলেও ইমিগ্রেশন পুলিশ এলো না। ওদিকে নিউইয়র্কগামী আমাদের ফ্লাইট ছাড়ার সময় হয়ে গেল। মাইকে প্লেনে উঠার জন্য আমাদের নাম ধরে ডাকা হচ্ছে, শুনতে পাচ্ছি। পুলিশও শুনেছে। তার মনে কি দয়া হল কে জানে ! সে আমাদেরকে চলে যেতে বলল। একথা শুনে বুক থেকে যেন বিরাট পাথর সরে গেল। প্লেনে উঠে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম – আর কোন দিন নিজের এলাকার বাইরে যাব না।

৫.

কাজ শেষে রাত বারোটায় সেভেন্থ এভ্যিনু স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষা করছিলাম আমি আর আব্বাস ভাই। সারাদিনের কর্মক্লান্ত শরীর নিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কোন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। এবং সেটা অবশ্যই বাংলায়। আব্বাস ভাই খুব রগচটা মানুষ। নিজের পরিচিত জগৎ এর বাইরে কারো সাথে সহজ হন না। কথাও বলেন না।একাশি থেকে এই দেশে আছে। কেতাদুরস্ত মানুষ। ওনারও তখন পর্যন্ত গ্রীনকার্ড হবে হচ্ছে অবস্থায় আছে।

খেয়াল করি নাই স্টেশনে আর কেউ আছে কিনা। হয়ত ছিল কিন্তু দেখি নাই। আচমকা ভোজবাজির মত এক দেশী মানুষ আমাদের সামনে এসে হাজির হয়।

এসে প্রশ্ন করে – আপনারা কি বাংগালী ?

বিরক্ত আব্বাস ভাই উত্তর দেয় – কেন আমাদের দেখে কি অন্য দেশী মনে হয় নাকি ! বাংলা কথা শুনেই তো এদিকে এসেছেন।

সেই মানুষ দাঁত বের করে বলে – সেটা বুঝতে পেরেছি। তবুও সিউর হলাম আর কি !

বুঝলাম ইনিও ওপি ওয়ান ভিসা পেয়ে এসেছে। চাঁন কপালের মানুষ।

আমার মত আব্বাস ভাইয়ের ও পছন্দ নয় গ্রীনকার্ড ওয়ালা নতুন মানুষদের।
আমরা বিরক্ত হচ্ছি। ওনার সাথে কথা বলতে আগ্রহী নই। এটা বুঝেও তিনি নাছোড় বান্দার মত পরবর্তি প্রশ্ন ছুঁড়ল – আশে পাশেই কি কাজ কাম করেন ?

তাকিয়ে দেখি আব্বাস ভাই রেগে লাল হয়ে যাচ্ছে। উনি কিছু উত্তর দেয়ার আগেই ভদ্রলোক বোকার মত একটা লুজ বল করে বসল। বলে – কি কাজ করেন আপনারা, কত বেতন পান ?

এমন বল আসবে যেন জানত আব্বাস ভাই। পেয়েই উঠিয়ে ছক্কা মারলেন। রেগে চিৎকার করে উঠলেন – অই মিয়া, এত কতা জিগান ক্যান। বইন বিয়া দিবেন নাকি ?

এবার আর আমি হাসি চাপতে পারলাম না। অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। আর সেই ভদ্রলোক চুপিসারে কেটে পড়ল।

৬.

কয়েক বছর পরের কথা। টুইন টাওয়ার তখনো স্বগর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল সব উচুঁ দালানের সীমা ছাড়িয়ে। আব্বাস ভাই, সিরাজ ভাই দেশে ফিরে গিয়ে সফল ব্যবসায়ী হয়েছেন। আমিও চাকরি ছেড়ে একটা শপ খুলে বসেছি। কাগজপত্র তখনো ঝুলে আছে আদালতে।

এইটথ এভিনিউ তখন ড্রাগ, প্রসটিটিউট, পিপ শো, পকেটমার, ধোঁকাবাজ এসবের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানেই আমার শপ। এলাকা খারাপ হলেও ট্যুরিস্টদের ঘুরে বেড়ানোর জায়গা বলে বানিজ্য ভালই হয়। এলাকার সব চোর চ্যাঁছড়্গুলির সাথেও খাতির রেখেছি নিজের ঠেকায়। ভালই দিন কাটছিল।

একদিনের কথা। ডাবল শিফটের কাজ করছিলাম আমি। মানে সকাল নয়টায় শুরু করেছি, শেষ করব রাত বারটায়। সাথে আরো দু’জন দেশী ছেলে। বয়সে অনেক তরুন। নতুন এসেছে দেশ থেকে ট্যুরিস্ট ভিসায়। মানে কাজ করার কোন অনুমতি নাই। কাজ তো করতেই হবে। আর কাউকে তো ওদেরকে কাজ দিতেই হবে।

আমার ঠিক পাশের শপটা ছিল ‘পিপ শো’ মানে পয়সা দিয়ে ছোট একটা কাঠের ফুটা দিয়ে লেংটা মেয়েমানুষ দেখার ব্যবস্থা। খুব চালু ব্যবসা। নিউইয়র্কে বেড়াতে এলে যে কেউ এই শো দেখবেই। ব্যবসা বৈধ। কিন্তু শো এর মেয়েরা অবৈধ ছিল। সেটা পরে জেনেছি। জীবিকার ধান্দায় পৃথিবীর কত দেশের নারী পুরুষ এখানে আসে, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এসব মেয়েরা সবাই ইস্ট ইয়োরোপের কম্যুনিস্ট ব্লকের গরীব দেশগুলি থেকে আসা। ডানা কাটা পরীর মত দেখতে। ট্যুরিস্ট ভিসায় আসে। দুই তিন মাস এসব কাজ করে মোটা অংকের টাকা আয় করে নিজ নিজ দেশে ফিরে যায়। কেউ কেউ আর ফিরে যায়না।

ব্যবসা খুব স্লো যাচ্ছিল। তাই কাগজপত্র খুলে হিসাব নিকাশ দেখছিলাম আপনমনে। বিকেল পাঁচটা হবে সময়। বাইরে তাকাই নাই এতক্ষন। কোন মানুষ কেন শপে ঢুকছে না দেখার জন্য গেটের বাইরে গিয়ে দেখি এলাহি কান্ড। পুরো এলাকা সিল করে দিয়ে রেইড দিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। সবুজ ড্রেস পরত তখন ওরা। দেখে চমকে গেলাম। ভিতরে কাঁপতে শুরু করলেও বাইরে ‘কোন ব্যাপার না’ ভাব নিয়ে পিপ শো’র ইয়া উচাঁ লম্বা সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। বলে, ওরা ইল্লিগ্যাল পিপল ধরতে এসেছে।

কিছু না বলে শপে ফিরে এলাম। এসে আমার দুই এমপ্লয়িকে বললাম, কোন কথা না বলে, কোন দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ বের হয়ে রাস্তা পার হয়ে অপর পারে গিয়ে মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। সব মিটে গেলে তারপর যেন ফিরে আসে। কেন এমন বলছি, ওরা না বুঝে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

তখন বুঝিয়ে বললাম – আরে গাধা, বড় মামারা রেইড দিয়েছে। কাগজ ছাড়া মানুষ ধরতে এসেছে। সরে গিয়ে জান বাঁচাও।

এইবার বুঝল। কথা না বলে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল।

আমরা তখন পুলিশকে বলতাম ‘ছোট মামা’ আর ইমিগ্রেশন পুলিশকে ‘বড় মামা’ ডাকতাম।

উইন্ডো দিয়ে তাকিয়ে দেখি হাতে হাত কড়া পরিয়ে মেয়েদেরকে লাইন ধরে ভ্যানে উঠাচ্ছে। কিছু অফিসার রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করছে। মাঝে মাঝে আমার শপের ডিসপ্লেতে তাকিয়ে দেখছে।

মনে মনে আল্লাহকে বলা শুরু করলাম – এ যাত্রা বাঁচিয়ে দাও। আর কোন দিন নামাজ পড়ায় ফাঁকি দিবনা।

একটু পর সাদা শার্ট পরা (সাদা শার্ট পরে সিনিয়র অফিসার) একজন আমার শপে এসে ঢুকল কাস্টমারের মত। দেখে যত দোয়া দরুদ, সুরা মনে আছে সব পড়া শুরু করে দিলাম নীরবে।

মুখে হাসি ধরে রেখে বললাম – হ্যালো অফিসার, হাও আর ইউ ? হোয়াটস গোয়িং অন আউট দেয়ার ?

সে হেসে দিয়ে বলে – টেল মি এবাউট ইট। অল দৌজ সুইট হার্টস নেক্সট ডোর আর ইল্লিগ্যাল। সাম বডি কল্ড এন্ড কম্পলেইন্ড। আই হেইট টি সি দে আর হ্যান্ডকাফড এন্ড প্রসেসড।

তারপর আমাকে বলে – উই মাস্ট হ্যাভ হ্যাম্পার্ড ইউর বিজনেস। সরি এবাউট দ্যাট। জাস্ট ডুইং আওয়ার জব।

আমি ক্যাবলার মত হেসে বললাম – ওহ ইয়েস, ইল্লিগ্যালস মাস্ট বি ডিটেইন্ড।

তারপর আমাকে ‘গুডলাক’ বলে সে বের হয়ে গেল। আমিও বুক ভরে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম। যদি ভুলেও আমাকে কোন কাগজ দেখাতে বলত, তাহলেই আমার কেল্লা ফতে হয়ে যেত।

৭.

এইটি ফার্স্ট স্ট্রিটে এপার্টমেন্টে ভাড়া থাকি তখন। একানব্বইয়ের কথা। চারতলা হাউজিং কম্পলেক্সে আমি ছাড়া আরেকটা বাংগালী পরিবার থাকে। আমি চার তলায় আর ওরা দোতলায়। ঠিক আমার বাসার দুই ফ্লোর নীচে ওরা। একবার মহিলা বাচ্চা নিয়ে বাথরুমে আটকা পড়ে জানালা দিয়ে ‘হেল্প মি’ বলে চিৎকার করা শুরু করলে আমি চারতলা থেকে শুনতে পেয়েছিলাম। সাহায্য করতে গিয়ে জানলাম ওরা দেশী মানুষ। সেই থেকে সখ্যতা শুরু। তরকারির বাটি আদান প্রদান হয়।

পুরান ঢাকার শাখারীপট্টির মানুষ। একদম ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষায় কথা বলে দাদা। আমার খালার বাড়ি সিদ্দিক বাজারে। ওদের বাসায় যেতে যেতে আমিও কুট্টিদের উচ্চারন ভালই বুঝি, বলতে পারি। দাদার সাথে আমার জমে গেল। দিল দরিয়া মানুষ। পেটে কোন কথা রাখতে পারে না। সব উগলে দেয়।

এক ছুটির দিন সকালে নাস্তা খেতে ডাকল আমাকে। তারপর খুব বিজয়ীর হাসি দিয়ে গুপ্তধন দেখানোর মত করে তালা বন্ধ ব্যাগ খুলে একটা খাম বের করল। বুঝতে পারছিলাম না কি দেখাতে চাইছে। ভাবলাম হয়ত ইমিগ্রেশনের কেইস এপ্রুভাল লেটার পেয়েছে। সেটাই দেখাতে চাইছে। প্রবাসীদের কাছে এর চাইতে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না।

কিন্তু না।

কোন চিঠি না। তিনি খাম খুলে নীল রং এর একটা আমেরিকান পাসপোর্ট বের করে আমার হাতে দিলেন। আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। এর আগে কখনো এই দেশী পাসপোর্ট দেখি নাই। তাই হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলাম ভাল করে।

তিনি সিগারেট ধরিয়ে পান খাওয়া দাঁত বের করে বিজয়ের হাসি নিয়ে বলতে লাগলেন – বুঝলেন দাদা, কোন ডাইন বাম না। চিপা গল্লি না। এক্কেবারে ডাইরেক্ট আসল মাল লইয়া লইছি।

কেমন করে একেবারে সরাসরি পাসপোর্ট পেল, জানার খুব ইচ্ছা হল। কিন্তু কি আবার মনে করে বসে, তাই আর জিজ্ঞেস করা হয় নাই। আমি উঠব এমন সময় জানালেন, আগামী দিন রাতের বেলায় ওনার বাসায় এই উপলক্ষে পার্টি হবে। খাওয়া দাওয়া, সুরা পান, গান বাজনা হবে রাতভর। সুবির নন্দী গান গাইবেন।

বাহ্, দারুন ব্যাপার। আসব বলে কথা দিয়ে আমি চলে এলাম।

পরদিন আসোলেই অনেক আনন্দ হল। দাদার সব ইয়ার দোস্তরা এল সস্ত্রীক। সবাই ওনার পাসপোর্ট হাতে নিয়ে দেখতে লাগল।

মাতাল হয়ে একজন জিজ্ঞেস করে বসল – তুই এসেছিস এক বছর ও হয় নাই। তাহলে কিভাবে পাসপোর্ট পেয়ে গেলি?

উত্তরে উনি শুধু হাসলেন।

কেমন করে কি হয়েছে জানি না। পরদিন ভোর বেলা কাজে যাওয়ার সময় বিলডিং এর সুপার আমাকে দেখে জানায় – ভোর রাতে নাকি এফ,বি,আই রেইড দিয়েছিল দোতলার দাদার বাসায়। ওরা দাদাকে ধরে নিয়ে গেছে। কারন উনি নাকি নকল পাসপোর্ট কিনেছেন, যা ফেডারেল ক্রাইম।

আচ্ছা, এতক্ষনে আসল ব্যাপার বোঝা গেল। আবার তাঁরই কোন হিংসুটে বন্ধু সেই খবর ফোন করে এফ,বি,আইকে জানিয়ে দিয়েছে। সাথে সাথে সেই লোকের কপাল পুড়ল।

৮.

বাংগালী পাড়া হিসাবে পরিচিত জ্যাকসন হাইটস এ একটা সিংহ মার্কা বহুতল এপার্টমেন্ট বিল্ডিং আছে। সেই বিল্ডিংএর বেশীর ভাগ বাসিন্দা বাংগালী। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মসলার গন্ধ পাওয়া যায়। তাই অনেকে ঠাট্টা করে নাম দিয়েছে ‘কারী হাউজ’।

একদিন গভীর রাতে সেই বিল্ডিং এফ,বি,আই, আর ইমিগ্রেশন একসাথে রেইড দিল। ওদের কাছে খবর ছিল – সেই বিল্ডিং এর একটা এপার্টমেন্ট এর ঠিকানা থেকে পাঁচশোর বেশী ডিভি লটারির আবেদন করা হয়েছে, যা খুব বেআইনী কাজ। রেইড দিয়ে সেই বাসার মানুষদের গ্রেফতার করল। আশেপাশের সব বাসায় ঢুকে সার্চ করল। সবার কাগজপত্র যাচাই করল। এর ভিতর আমার পরিচিত একটা পরিবার ছিল যারা সেই দালানে ভাড়া থাকত। তাদের কাগজ পত্র ছিল না। কিন্তু বৈধতার জন্য আবেদন করা কাগজ পত্র দেখালো। সরকারী লোকজন আসোলে বুঝতে পারে কে কেমন মানুষ। তারা খেয়াল করল, আমার পরিচিত পরিবার খুব সাধারন আর শান্তিপ্রিয় মানুষ। এক সন্তান নিয়ে আমেরিকান ড্রিম বাস্তবায়নের চেষ্টায় আছে। তারা তার কাগজে নোট লিখে দিল। সেটা নিয়ে পরদিন ফেডারেল প্লাজায় যেতে বলল। সে গেল এবং বাড়তি কোন প্রশ্ন ছাড়া তারা তার কেইস এপ্রুভ করে সপরিবারে থাকার কাগজ দিয়ে দিল। সাথে সাথে সৎভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টায় থাকা একটা পরিবারের জীবনের মোড় ঘুরে গেল।

ছাব্বিশ নং ফেডারেল প্লাজা বিল্ডিং চেনে না এমন অভিবাসী মানুষ খুব কম আছে। যারা দেশ থেকে ইমিগ্র‍্যান্ট ভিসা নিয়ে এসেছে, তাদের হয়ত সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে নাই। কিন্তু যারা নানা কায়দায়, নানা ফন্দিতে একটা বৈধ কাগজ বানানোর চেষ্টা করেছে, তারা সবাই ম্যানহাটান ডাউন টাউনের এই ফেডারেল বিল্ডিংএ শত শত বার গিয়েছে। গিয়ে কেউ সফল হয়েছে। কেউ ব্যর্থ হয়েছে। কেউ মিথ্যা বয়ান প্রমানে গ্রেফতার হয়ে গেছে। আবার অতি চালাক কেউ মতিগতি ভাল না দেখে ইন্টারভিউ ফেইস না করে ধরা খাওয়ার হাত থেকে পালিয়ে বেঁচেছে।

সবার অভিজ্ঞতা ভিন্ন। তবে সবই তিক্ত। তবে দুঃখটা হল সহজে কোন কাগজ কারো কপালে জোটে নাই, যারাই কাগজ ছাড়া এই দেশে ঢুকে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মুরাদ হাই

১২ই অক্টোবর, ২০১৬