কিম ফুক : যুদ্ধ শিশু
পৃথিবীর পাঁচটা কম্যুনিষ্ট দেশের ভিতর ভিয়েতনাম একটা। প্রথমে ফ্রান্স ,তারপর জাপান এরপর আমেরিকার পোষ্য দক্ষিন ভিয়েতনাম এবং আমেরিকার সাথে দুই যুগ ধরে যুদ্ধ করে উত্তরের জয় হয়ে এক ভিয়েতনাম সৃষ্টি হবার ও চল্লিশ বছর পার হয়ে গেছে।দুই মিলিয়ন মানুষ প্রাণ দিয়েছে এই দীর্ঘ যুদ্ধে।ওরাও ষাট হাজার আমেরিকান সৈন্যের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আমেরিকাকে ভিয়েতনাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে। বৃহষ্পতিবার ছিল তাদের চল্লিশতম স্বাধীনতা দিবস।
ব্যানারের বিখ্যাত এই ছবিটার কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। তেতাল্লিশ বছর আগের কথা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ছবির নগ্ন মেয়েটার নাম কিম ফুক। যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর।নর্থের কম্যুনিষ্ট গেরিলাদের সাথে সম্মুখ সমরে পেরে না উঠে দক্ষিন ভিয়েতনাম আমেরিকার সরবরাহ করা নাপাম বোমা ( রাসায়নিক বোমা ) ব্যবহার করে নর্থ ভিয়েতনামের মানুষের উপর। ১৯৭২ সালে সায়গনের উপর এই রাসায়নিক বোমা ফেললে অনেক মানুষ ঝলসে যায়।
তার ভিতর ছিল নয় বছরের মেয়ে কিম ফুক। বোমার তীব্র রস্মিতে কিমের শরীরের কাপড় পুড়ে ছাই হয়। শরীরের একাংশ এবং পিঠ সম্পুর্ন ঝলসে যায়। প্রচন্ড ব্যথায় কাতর হয়ে কিশোরী কিম সায়গনের রাস্তায় নগ্ন হয়ে চিৎকার করে কাঁদছিল। সেই যুদ্ধকালীন সময়ে আমেরিকান ফটো সাংবাদিক Nick Ut কিমের এই ছবিটা তোলে। সেই ভদ্রলোকই কিমকে প্রথম হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দিতে বাধ্য করে হাসপাতালের ডাক্তারদের।দুই বছর হাসপাতালে কাটিয়ে শরীরের প্রায় অর্ধেক চামড়া মাংস হারিয়ে পংগু হয়ে জানে বেঁচে ফিরে আসে কিম।
নাপাম বোমার রাসায়নিক ক্রিয়ায় পুড়ে যাওয়া মানুষদের বেশীরভাগই মারা গেছে তৎক্ষণাৎ। পুড়ে যাওয়া জায়গা লেসার চিকিতসায় কিম ফিরে পাচ্ছে তার শরীরের অকেজো নার্ভস আপ্সহের চামড়ার চাইতে চারগুন ভারী হয়ে ঝুলে থাকে। ব্যথা কখনোই থামে না। এ যেন চিরস্থায়ী । কিম বলে, এই ব্যথা সেইদিন সারবে যখন সে একেবারে স্বর্গে চলে যাবে, তার আগে নয়।
চিকিতসায় কিমের শরীরের পোড়া দাগ মুছে যাচ্ছে। ফিরে পাচ্ছে মরে যাওয়া পেশীর অনুভুতি।
আহত ,পঙ্গু হয়েও কিম থেমে থাকে নাই। দেশে বিদেশে অনাথ যুদ্ধ শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এক মহৎ হৃদয়ের মানুষের সংস্পর্শে আসে কিম। সে’ই কিমকে আমেরিকার মায়ামির এক বিখ্যাত স্কিন ডাক্তারের ঠিকানা দিয়ে যোগাযোগ করতে বলে। প্রথমে পাত্তা না দিলেও একদিন কিম ঠিক সেই ডাক্তারের কাছে ফোন করে এপয়েন্টমেন্ট নেয়। সেই ডাক্ত্রার কিম এর চিকিৎসা করছে।
সেরে উঠছে কিম। বায়ান্ন বছর বয়সী কিম ফিরে পাচ্ছে তার শরীরের হারিয়ে যাওয়া সব টিস্যু। আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে সব পোড়া দাগ। ডাক্তার জানায় ,কিম এর অস্বাভাবিক শক্তিশালী মনোবলই তাকে আসলে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করছে। কিম যেন কোন সাধারণ মানুষ নয় ,বরং হার মানতে রাজী না থাকা এক লৌহমানবী। এক যুদ্ধ বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা।
২৬শে মার্চ, ২০১৬