ও বন্ধু আমার

১.

মাহিন ধেই ধেই করে নাচছে। আনন্দ আর ধরছে না। এক বছর ধরে কুর্চি’র সাথে আড়ি ছিল। এতদিন পর আজ তার মান ভেঙ্গেছে।
না,সে নয়।মেয়েটাই রেগেমেগে আড়ি নিয়ে মুখে তালাচাবি লাগিয়ে দিয়েছে। আড়ি নিবে না কেন !
মাহিনের কট কট করে বলা কিছু কথা তার ভাল লাগে নাই।

ব্যস,সেই থেকে কথা বলাবলি বন্ধ। মাহিন কথা বলার অনেক চেষ্টা করেও কাজ হয় নাই। কতবার ‘সরি’ বলে টেক্সট পাঠিয়েছে। বরফ গলে নাই।
এতদিন পর আজ তার মান ভেঙ্গেছে। কুর্চি অনলাইনে ফিরে এসেছে। আবার দুজন কথা বলছে।

এমনিতে খুব গম্ভীর,চুপচাপ প্রকৃতির মানুষ মাহিন। কিন্তু অসম্ভব ঠোঁটকাটা টাইপ। আর এজন্যই শুধু ঠোকাঠুকি লেগে যায় এর ওর সাথে।
কুর্চি তাকে খুব বুঝতে পারে। তার স্বভাব জানে। সে নিজে অনেক ত্যাড়া মেয়ে। তবুও মাহিনের মেজাজ সহ্য করে চলে। সেদিন আর পারে নাই যখন তাদের একটা

আলোচনায় মাহিন তাকে বলেছিলো, ‘তুমি আমার বাল বুঝো।’
ব্যস,তার মাথায় আগুন ধরে যায়। সে সাথে সাথে ফোন রেখে দেয়। তারপর মাহিনকে ফেইসবুক, ভাইবার,সবখানে ব্লক করে দেয়।

২.

মাহিন কুর্চিকে প্রথম দেখে রাইসু’র ফেইসবুকের পাতায়। রাইসু’র কোন লেখায় তার মন্তব্য ছিল। প্রোফাইল দেখে তার খুব ভাল লেগে যায়। তারপর বন্ধুত্ব হয়।
কুর্চি লেখে। মাহিনও হাবিজাবি লেখে। কুর্চি মাহিনের প্রুফ রিডারের মত সব লেখায় বানানের ভুল ধরে। ওসব সংশোধন করে দেয়।

এছাড়া মেয়েটা দুর্দান্ত ভাল ছবি তোলে।

বিজয় দিবস নিয়ে একটা লেখায় মাহিন স্মৃতি সৌধের যে ছবিটা ব্যবহার করেছে গুগল থেকে নিয়ে, কুর্চি দাবী করে বসে সেটা নাকি তার তোলা।
শুনে মাহিন হেসে উড়িয়ে দেয়।

বলে, গুল মারার আর জায়গা পাও না। ওটা এরিয়াল ফটোগ্রাফি। মানে আকাশ থেকে তোলা হয়েছে। তো কুলসুম খাতুন, তুমি কি বাজ পাখির ডানায় উইঠা এই ছবি উঠাইছিলা নাকি ! কূর্চিকে কুলসুম বলে প্রায়ই খেপায় মাহিন।

কুর্চি এসব ব্যঙ্গ গায়ে মাঝে না একদম। ছবির ব্যাপারটা এক্সপ্লেইন করে ঠাণ্ডা মাথায়। এমনিতে মেয়েটা মোটেও রাগে না। শান্ত স্বভাবের।

বলে – জানো, আমার এই ছবিটা একজন বিখ্যাত লোক চুরি করে নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছে। আমি তাকে মেসেজ পাঠিয়ে সাবধান করেছি। আমার আসল ছবি দেখিয়েছি। থ্রেট করেছি, ছবির স্বত্ব থেকে নিজের নাম না উঠালে প্রমানসহ মামলা ঠুকে দেব। তারপর লোকটা বাধ্য হয়েছে ছবি থেকে নিজের নাম সরিয়ে নিতে।
শান্ত হলেও সে মানে কুর্চি এমন মিচকা ত্যাড়া।

তারপর জানায়,সেদিন সে হেলিকপ্টারে উঠেছিল। লটারিতে নাম উঠায় হেলিকপ্টারে ফ্রি রাইড পেয়েছিলো সে। সাথে ছিল তার প্রিয় খেলনা এস,এল,আর ক্যামেরাটা। সাভারের উপর দিয়ে ক্রস করার সময় দুর থেকে তার চোখে পড়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের অপুর্ব ফ্রেম। ব্যস, কাজে নেমে গেল ছবি তোলার পাগল মেয়ে।
অনেকগুলি ফ্রেম থেকে বেছে একটা ছবি অনলাইনে আপলোড করেছিল সে। তখনো সে শেখে নাই কেমন করে নিজের তোলা ছবিতে সিগনেচার প্রিন্ট করতে হয়। কয়দিন পরে আবিষ্কার করলো এক পেশাদার মানুষ সেই ছবি নিজের বলে চালিয়ে দিয়ে বাহবা কুড়াচ্ছে।

৩.

এমন হাবিজাবি অনেক বিষয় নিয়ে প্রতিদিন কথা হয় তাদের। ঝগড়া হয়। খোঁচাখুঁচি তো আছেই।
সম্পর্কের কোন বিশেষ নাম নাই। কিন্তু তবুও অনেক টান আছে। আছে নীরব বিশ্বাস এবং নির্ভরশীলতা।
সব কথা শেয়ার করে দুজনে। ভাল কিংবা মন্দ। অতি গোপন কিংবা একান্ত ব্যাক্তিগত হলেও।

মাহিন বলেছিল, চল প্রেম করি। দারুণ জমবে। কোনদিন দেখা হবে না। সো নো চিন্তা। অনলাইন প্রেম। একেবারে অনন্ত প্রেম হবে।

কুর্চি বাধা দিয়েছে।

বলে – প্রেমের খ্যাতা পুড়ি। ওসব বাদ দাও। এমনিতে আমরা অনেক ক্লোজ। এই ক্লোজনেস প্রেমের চেয়ে ভাল। প্রেম সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলে। কয়দিন পরই দাবী দাওয়া বাড়বে। পেলে কিংবা না পেলে আইদার ওয়ে,প্রেম মানে সংঘাত হবে। এখন যেমন আছি, এটা সবচেয়ে মধুর। আমাকে তুমি শুধু মেয়ে হিসাবে দেখো কেন ! বন্ধু ভাবো, দেখবে তাইলে প্রেমের চেয়ে বেশী মজা পাবে।

কথা একদম মিথ্যা বলে নাই। আসলেই বন্ধুত্ব প্রেমের চেয়ে অনেক মধুর। কোন লুকোচুরি করা লাগে না। এর চেয়ে শান্তির আর কি হতে পারে একটা ছেলের কাছে। মাহিন কাউকে টাংকি মারলে সেটা কুর্চির সাথে শেয়ার করে হাসাহাসি করে। আর কুর্চি প্রতিদিন ইনবক্সে যত প্রেমের চিঠি পায়, তার সব মাহিনকে ফরোয়ার্ড করে।

মাহিন বলে, ওসব নিয়ে প্রেমপত্র সমগ্রনামে একটা বই ছাপাবে। উৎসর্গ করবে রাইসুকে।

ঘুমোনো ছাড়া বাকী সময় অন এন্ড অফ ওরা টেক্সটে সারাক্ষণ খোঁচাখুঁচি করে বেড়ায়। কোথায় কি হল । কার অফিসের বস আজ কি করেছে এসব কিছু শেয়ার হয়ে যায়। শেয়ার হয়ে যায় কার বাসায় নতুন কি ঘটেছে,সেসবও ।

কুর্চি একটা এনজিও’তে জব করে। স্বামী পরিত্যক্ত,নির্যাতিত মেয়েদের নিয়ে কাজ করে। কাজটা তার খুব পছন্দের। তাই অনেক বছরেও ওটা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারে নাই।

মাহিন বলেছিলো, এগুলির ভবিষ্যৎ ঝরঝরা। বদলায়ে ফেলো।
শুনে মেয়েটা রেগে যায়। তার আসোলে ক্যারিয়ার নিয়ে কোন উচ্চাকাঙ্খা নাই। তাই এই কাজেই সে মহা সন্তুষ্ট।
ওকে ফাইন,বলে এই বিষয়ে কথা বলা খ্যামা দিয়েছে মাহিন।

তাদের কোন দিন দেখা হয় নাই। হবেও না। তেমনই চুক্তি হয়েছে তাদের ভিতর।

৪.

মাহিন জানে কুর্চি খুব শুচিবাই মানুষ। রিক্সাওয়ালার দেয়া ভাংতি কিংবা মাছ বাজারের ময়লা টাকা সে বাসায় নিয়ে গিয়ে সাবান দিয়ে ধোয়। আর পশু পাখী, কুকুর বিড়াল এসবের প্রতি তো তার কোনোই আগ্রহ নাই।

সেই নাকউঁচা মেয়েটা একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখে,তার রাজপুত্তুর ছেলে কোত্থেকে যেন পিচ্চি একটা বিড়াল ছানা কিনে বাসায় নিয়ে এসেছে। সেটা নিয়ে তাদের বিশাল যৌথ পরিবারের সবাই মহা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

শাশুড়ী এমনিতে খুঁতখুঁতে মানুষ। একটু পর পর গিয়ে অজু করে আসে। সেই তিনি বসে বসে মায়ার চাহনি নিয়ে বিড়ালের মাথায় হাত বুলাচ্ছে। কুর্চির সদা গম্ভীর কুম্ভকর্ণ স্বামীর মুখেও আনন্দের হাসির রেখা দেখে সে একদম অবাক হয়ে গেলো।

সবাই জানে কুর্চি এসব একদম লাইক করে না। তাই তাকে বাসায় ঢুকতে দেখে সবার কোলাহল থেমে গেলো মুহূর্তে। কি জানি ঘটে এই ভেবে মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে শুরু করলো সবাই।

ছেলেটা এগিয়ে এসে বলে, মা প্লিজ রাগ করো না। ওটা আমি কিনে এনেছি। দেখে এতো আদর লাগলো যে না এনে পারি নাই।

নর্থ সাউথে পড়ে ছেলে। দাড়ি মোচের রেখা ঘন হলেও একদম ছেলে মানুষ রয়ে গেছে এখনো। তার কখনো কোন আবদার থাকে না। তাই আজ যখন সামান্য একটা বিড়াল ছানাকে এনে এমন অনুনয় করছে মায়ের সাথে,কুর্চি আর কিছু বলতে পারলো না। বুঝলো এই বিড়াল ছানাটা বাসার সবাইকে জাগিয়ে তুলেছে।

সে মৃদু হেসে শুধু বললো,ঠিক আছে বিড়ালটা থাকবে। তবে তার দেখাশোনাও তোমাদেরকে করতে হবে। মনে থাকে যেন।

মা রাজী হয়ে যাওয়ায় ছেলে মেয়ে দুটোই খুশিতে মাকে জড়িয়ে ধরলো। শাশুড়িও মুখ টিপে হাসলো। আর সাহেব অবাক হয়ে তখনো তাকিয়ে রইলো কুর্চির দিকে।

বাসায় বিড়াল রাখার ব্যাপারে নিমরাজী হলেও কুর্চি কিন্তু ছানাটার দিকে একবার ভালো করে তাকিয়েও দেখলো না। পশুরা মানুষের চেয়ে অনেক বেশী বুঝে। বিড়ালটা বুঝেছে বাড়ির কর্ত্তী তাকে লাইক করে নাই। তাই কুর্চি বাসায় ফিরলে সে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকে। যদিও কুর্চি চোরা চাহনিতে এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকে খুঁজে বেড়ায়।
বিড়াল ছানা সেটা টের পেয়ে একটু একটু করে তার কাছে ঘেঁষতে শুরু করলো। অফিস থেকে ফিরে কুর্চি যখন চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় বসে, বিড়ালটা তার পায়ের কাছে এসে চুপটি করে বসে থাকে। চোখ দুইটা ছলছল করে এতিমের মতো তাকিয়ে থাকে। অমন দেখে বাইরে কঠিন আসোলে ভিতর নরম কুর্চির মন গলতে শুরু করে। সে ‘ম্যাও’ বলে ওকে ডাকে ইশারায়। অমনি ছানাটা দৌড়ে এসে তার কোলে উঠে বসে শরীর এলিয়ে দিলো। এতক্ষনে সে যেন তার আসল আশ্রয় খুঁজে পেলো।
পাখীর মত হাল্কা শরীর বিড়াল ছানাটার। কুর্চি সেই ছোট্ট শরীরে হাত বুলিয়ে দিলো। মাথায় বিলি কেটে দিলো। আদরের চোটে ছানা এবার তার হাত চেটে দিলো।

সেদিন থেকে বিড়াল ছানা নতুন নাম পেলো – ‘ ম্যাও।’

ম্যাও কুর্চি ছাড়া আর কারো হাতে খায় না। গোসল করতে চায় না। ঘুমায় কুর্চির বিছানায় তাদের দুজনের মাঝে নবাবজাদার মতো। অতঃপর ম্যাও সেই বাড়ির নতুন একজন সদস্য হয়ে গেলো পুর্ন অধিকার নিয়ে।

৫.

দিন কয়েক পরের কথা।
সেদিন শুক্রবার ছিল। মাহিনের মোবাইলে টুং করে আওয়াজ হল। হাতে নিয়ে দেখে কুর্চির মেসেজ।

– জানো,আমি এখন আকাশে উড়ছি।

মানে কি !

– তুমি একটা আস্ত গাধা। আমি এখন প্লেইনে। যশোর যাচ্ছি আম্মাকে দেখতে।

কেন,কোন খারাপ খবর নাতো !

– না, না। ওসব কিছু না। দুইদিন ছুটি পেলাম। তাই ভাবলাম আম্মাকে দেখে আসি একটু। খুশী হবে।

খুব ভাল করেছো। কি নিয়ে যাচ্ছ ওনার জন্য ? খাবার কিনেছ কিছু ? বুড়ো মানুষেরা পোলাপানের খাবার লাইক করে বেশী।

– একদম ঠিক বলেছ। সেজন্য চকলেট নিয়ে যাচ্ছি। খুব পছন্দ ওনার। লুকিয়ে লুকিয়ে খায়। নাতী নাতনীদেরও ভাগ দেয় না, জানো !

দারুণ তো – বলে মাহিন হাসল।

৬.

ওদের ঝগড়ার সূত্রপাত হয় কুর্চির অফিস নিয়ে মাহিন যখন কোন বাঁকা মন্তব্য করে। সে প্রায়ই বলে এনজিও মানে মানুষের জন্য সাহায্য চেয়ে এনে কিছু চতুর মানুষ আরামের জীবন কাটায়। কাজের কাজ কিছুই করে না। লোক দেখানো কীর্তি কলাপ সব। যদিও সেই উছিলায় কিছু মানুষের চাকুরীর ব্যবস্থা হয় – এটাই যা প্লাস পয়েন্ট।
এসব নিয়ে আলাপ করলে কুর্চি মহা ক্ষেপে যেতো। তার ধারনা তার অফিসের বড় টিপ পরা ভেরী পলিশড আঁতেল ভদ্রমহিলার মত ভাল মানুষ আর একটাও নাই। তাঁকে নিয়ে নেগেটিভ কোন কথা কুর্চি মানতে পারে না। শত বুঝালেও বুঝে না দেখে রেগে মেগে সেদিন মাহিন বলে বসেছিল – মাথা ভর্তি গোবর তোমার। তুমি আমার বাল বুঝো।

ব্যস, সেদিন থেকে কুর্চি আর কথা বলে না। একদম হারিয়ে গেছে। মাহিনও নাছোড় বান্দা। ফেইসবুক, ভাইবারে ব্লক খেয়ে হোয়াটস্যাপ ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম যেখানে যেখানে কুর্চির একাউন্ট ছিল, নক করেছে। কিন্তু সে নড়ে নাই।

কথা বলল নিজে থেকে, যখন মাহিনের কথাগুলির বাস্তব রূপ দেখল চোখের সামনে। অনিয়মের দায়ে সেই বিগ মাউথ তার প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে অপসারিত হয়ে গেলো। সন্তোষজনক রিপোর্ট না দিতে পারায় দাতা দেশগুলি ফান্ড দেয়া কমিয়ে দিল। ফলাফল হিসাবে খরচ কমাতে গিয়ে অনেকের সাথে কুর্চিও তার চাকুরী হারালো।

বছর খানেক পর তারা দুজন যখন আবার চ্যাট করতে শুরু করলো, কুর্চির প্রথম কথা ছিল – এই দেশের এমন আঁতেলগুলি আসোলেই অনেক বড় ভণ্ড এবং প্রতারক।
তা’ শুনে মাহিন শুধু বলল – যাক তোমার মাথা এখন খুব ভাল কাজ করে দেখছি।

৭.

গত সপ্তাহে হটাত কুর্চির তলব এলো। জানালো বান্ধবীদের সাথে কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছে। লেইডিজ ভ্যাকেশন। নো মেইল এলাউড।

মাহিন কয়, আমারে না নিলে কল দেও ক্যান ! যাও মাইয়ারা মিল্যা মুড়ি খাঁও গিয়া।

– মাহিন, তুমি এই কথাটা বলবা না। এটার মানে খুব খারাপ।

কোনটার মানে খারাপ আবার !

– মুড়ি খাওয়া।

বল কি ! কি রকম বাজে বল তো শুনি। আমি কেন জানি না তাইলে ?

– মুড়ি খাওয়া মানে হল ডার্টি সেক্স।

হোয়াট ? আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড, গার্ল ? আই নেভার হার্ড অফ ইট দোউ।

কুর্চি এবার বলে – তুই বেটা বেশী ফট ফট করলেও আসোলে অনেক কিছুই জানিস না রে।
মুডে থাকলে এক আধবার তুই তোকারি করে সে।

কক্সবাজার থেকে ফোন এলো। কুর্চি ফোন করে বলে – শোন, কয়টা ভাল ড্রিঙ্কের নাম দাও। খাবো।

মাল খাইবা ?

– ওই শালা বদ, মাল শব্দটা কইবা না। বিশ্রী লাগে শুনতে। লিকার বলো।

হ, মাল তো মাইয়া মাইনষেরেও বুঝায়। তোমার কথা ঠিক।

এরপর মাহিন মেয়েদের জন্য স্যুটেবল কয়টা মাইল্ড ড্রিঙ্কের নাম দিলো। মার্গারিটা, পিনাকোলাডা, মোহিতো। সাথে এটা বলে দিয়েছে, যদি কুইক ‘হাই’ হতে চাও তাইলে এসব খাওয়ার আগে গোটা তিনেক টাকিলা শট মেরে নিও।

এবার কুর্চি বলে – সাথে এক প্যাকেট সিগারেট আনলে ভাল হতো খুব।

মাহিন ভয় দেখিয়ে বলে, দাঁড়া ছেমরি, তর জামাইরে খবর দিয়া ব্যাপারটা জানাই। নিরীহ জামাইটারে সাত পাঁচ বুঝায়া তরা হোটেলে উইঠা লীলা করতেসোস ।

সাথে সাথে উত্তর চলে এলো – যা বল গিয়া। আমি কি কাঁচা কাজ করি নাকি। জামাইরেও ফোন করে ড্রিংকের নাম জিগাইছিলাম। শুধু বলসে, একটা দুইটার বেশী খেয়ো না। সামলাইতে পারবা না।

নারে, তোমার জামাইটা আসোলেই খুব ভাল মানুষ। তোমারে অনেক স্পেইস দেয়। বাঙ্গালী কালচারে এইটা এক্কেরে বিরল ব্যাপার কিন্তু। মনে রাইখো।
কুর্চির উত্তর – ইয়েস আই নো, ডিয়ার। দ্যাটস হোয়াই হি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড। আই এম ইন্ডিড এ লাকি গার্ল।

৮.

মাহিন বোহেমিয়ান পোলা। বিয়ে করেছিলো একবার। ছয় মাস পর মিউচুয়ালি ওরা ডিভোর্স নিয়ে নিয়েছে। তারপর আর সেই পথ মাড়ায় নাই। একা থাকতে পছন্দ করে। কুর্চি তাকে বিয়ে দিতে চেয়েছে। মাহিন রাজী না। এসব নিয়ে তাদের প্রায় প্রায় ঝগড়া হয় বিশেষ করে মাহিন যখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে।
বাপ মা নাই । ভাইবোনের সাথে মেশে না। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া একটা ফ্ল্যাটে থাকে সে। রান্নার বাতিক নাই। মোড়ের বারেকের হোটেল থেকে খেয়ে নেয় যখন দরকার হয়। বাইরেই থাকে সারাদিন। শুধু কোন লেখা জমা দেয়ার তাড়া থাকলে কয়দিন আর ঘর ছেড়ে বের হয় না।

৯.

বড়দিনের বন্ধ সব অফিস আদালত। তাই আজ কুর্চি মনের আনন্দে রিক্সায় চড়ে ক্যামেরা ঝুলিয়ে ছবি তুলতে বেরিয়েছে। রিক্সা থেকে ফোন করলো মাহিনকে। ঘুমের ভিতর হাত বাড়িয়ে ফোনটা উঠিয়ে বলে, কেন জাগাও ঘুম থেকে, আম্মা !

অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো কুর্চির গলা।

বলে – উঠে পড়ো, বাপ। আজ তো বড়দিন। তুমিতো জানো, আমি হাফ ক্রিশ্চিয়ান। কাউকে গিফট দিতে ইচ্ছা হল। তাই তোমার জন্য সোনারগাঁ থেকে ব্রেকফাস্ট পাঠিয়েছি। প্লিজ উঠে খাও।

তুমি আমার ঠিকানা জানো কেমন করে !

– আমি তোমার সব জানি। আমাকে জানতে হয়।

যাইহোক, কথা কম বলে খেয়ে নাও। আমি ছবি তুলতে বেরিয়েছি। আমাকে উইশ করো যেন কয়টা দারুণ ছবি তুলতে পারি আজ। আজকাল কোন ছবিই আমার পছন্দ হচ্ছে না, বুঝলা !

মাহিন ভাবছে অন্য কথা। মেয়েটা তাকে কত কেয়ার করে, এটা সে কখনো ভাবে নাই। কখনো একটা ‘থ্যাংক ইউ’ পর্যন্ত বলে না মেয়েটাকে।

বুকের ভিতর খচখচ করতে লাগলো অপরাধবোধ। তক্ষুনি ইন্টারকম বাজলো।
সিকিউরিটি গার্ড বলছে ,স্যার আপনের কাছে কি জানি ডেলিভারি আইছে। একজন স্যুট টাই পরা সাহেব আসছে গাড়ী নিয়া।

ওনাকে উপরে পাঠিয়ে দাও।

ডোর বেল বাজলে দরজা খুলে দেখে সোনারগাঁ হোটেলের মানুষ। বুকের কাছে ট্যাগ লাগানো। সই করে ডেলিভারি নিলো।

দরজা বন্ধ করে বাক্সটা খুলে দেখে গরম খাবার। সাথে একটা মোড়ানো প্যাকেট। খুলে দেখে তার ভিতর আরমানী ব্ল্যাক কোড এর ফুল কোলন সেট।

ছোট্ট নোটে লেখা – ‘দয়া করে ফেলে না রেখে ব্যবহার কোরো।’- কুর্চি।

প্যাকেটটা পাশে রেখে মাহিন খাবারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কাল রাত থেকে কিছু পেটে পড়ে নাই নিট তিন পেগ শিভার্স ছাড়া। খেতে খেতে ভাবছে, কুর্চি ঝগড়া করলেও মেয়েটা অনেক লক্ষ্মীমন্ত। তাকে অনেক কেয়ার করে।

আচ্ছা কেমন কেয়ার করে ও ? গার্লফ্রেন্ডের মত নাকি বন্ধুর মত ? বন্ধুরা কি এমন হয় নাকি ! মনেতো হয় কুর্চি যেন তারে আম্মার মত কেয়ার করে। হুমকি ধমকি দেয়। আবার সোহাগ করে কথা বলে। উনিশ বিশ হলে কথা বলাও বন্ধ করে।

আচ্ছা এই মনে হওয়া কথাটা ওকে জানাতে হবে। ভেবে নিজেই হো হো করে হেসে দিলো। কারণ জানে, এই কথা শুনলে কুর্চি নির্ঘাত টেলিফোনেই ওর মাথা ফাটিয়ে দেবে।
তারপর শুধু ছোট্ট একটা টেক্সট মেসেজ পাঠালো সে – ‘মেরী খ্রিষ্টমাস, আম্মা। এন্ড থ্যাংক ইউ ফর ইউর নাইস ট্রিট।

২৫শে ডিসেম্বর, ২০১৭