খোয়াব

জব্বার সাহেব খুব পরহেজগার মানুষ। চার বার হজ্ব পালন করেছেন। তার দুইজন স্ত্রী আছে। বড় স্ত্রী দেশে থাকে। ছোট স্ত্রী তার সাথে আমেরিকায় থাকে। তিনি দুইটা পোলট্রি ফার্মের মালিক। হালাল হাঁস মুরগী জবাই করে বিক্রি করেন। অনেক টাকার মালিক। কিন্তু বড় কিপ্টা মানুষ। হাতের ফাঁক গলে একটা পয়সা বের হয় না।

ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে। কিন্তু ওদের খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়তি একটা ডলার হাতে দেয় না। বাসার ফার্নিচার সব খুব পুরনো হয়ে গেছে। শোফার গদি ভেদ করে স্প্রিং বের হয়ে আছে। তার উপর কুশন দিয়ে বসেন তিনি। তবুও নতুন সোফা কেনেন না। এসব নিয়ে ছোট বউয়ের খুব দুঃখ।

পরহেজগার হাজী সাহেবের ব্যবসা জমজমাট হলেও তিনি সব সময় গলা শুকায়। খরচ করতে চান না। পরিবার নিয়ে বাইরে খেতে টেতে যান না। মসজিদ ছাড়া আর কোথাও দান খয়রাত করে না। সাহায্য করে না। তার ব্যবসার লেনদেন সব নগদে হয়। তিনি ফি দিতে হবে বিধায় ব্যবসায়ে ক্রেডিট কার্ড পেমেন্ট নেন না। ট্যাক্স দেয়ার ভয়ে টাকা ব্যাংকে রাখেন না। বাসায় সবার অগোচরে এমনভাবে লুকায় যা তিনি ছাড়া কেউ জানে না। টের পায় না। এমন কি তার নিজের স্ত্রীও না।

দেশ থেকে খবর এসেছে বড় স্ত্রী খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার দুইটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। আপাতত ডায়ালিসিস চলছে। তবে ট্রান্সপ্লান্ট না হলে বেশী দিন টিকবে না। তাই হাজী সাহেবকে হুট করে দেশে যেতে হল। ডাক্তারের সাথে আলাপ করার পর তারা বড় বউকে চেন্নাইতে নেয়ার পরামর্শ দিলো। সেতো অনেক টাকার ব্যাপার। কিপ্টা হাজী সাহেবের মাথায় হাত পড়লো। মাথায় হাত পড়লেও এড়ানোর কোন উপায় নাই। টাকা পয়সা আনার জন্য তিনি আবার আমেরিকায় ফিরে এলেন।

এদিকে তিনি যখন হুট করে দেশে চলে গেলেন সেই সুযোগে ছোট বউ মেয়েকে সাথে করে নিয়ে মেইসি’তে গিয়ে ক্রেডিটে ঘরের ফার্নিচার অর্ডার করে এলো। সোফাসেট, কিওরিও কেইস, বেডরুম সেট সব।ছেলে মেয়ের রুমের ফার্নিচারসহ সব কিছু। যথারীতি কয়দিন পর নতুন ফার্নিচারের ডেলিভারী এলো। তারা পুরনো ফার্নিচার উঠিয়ে নিয়ে নতুনগুলি সেট করে বকশিস নিয়ে চলে গেল। বাসার সবাই খুব খুশী এবার।

ফার্নিচার আসার দুইদিন পর হাজী সাহেব আমেরিকায় ফিরে এলেন। বাসায় ঢুকে নাকে অচেনা গন্ধ পেলেন। নতুন কিছুর গন্ধ। লিভিং রুমে পা দিয়ে নতুন সোফা দেখে মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। কোনমতে দেয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিয়ে বসে পড়লেন।

ছোট বউয়ের বয়স অনেক কম। দেশে বেড়াতে গিয়ে এক বন্ধুর অনুরোধ রাখতে গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন হাজী সাহেব। কিছুদিন আগে মেয়েটার মাত্র বিয়ে হয়েছে। অল্পদিন পরেই সাপের কামড়ে স্বামীটা মারা গেছে। হাজী সাহেবের বন্ধু গরীব পরিবারের বিধবা মেয়েটার জন্য বিদেশে একজন পাত্র খুঁজে দিতে বললে তিনি নিজে সেই পাত্র হয়ে গেলেন। খুব সুন্দরী ছোট বউ। তাই তাকে তিনি বেশী বকা ঝকা করতে পারেন না। বড় বউ আগে থেকে নানা অসুখে শয্যাশায়ী। তাই ছোট বউকে তিনি আমেরিকায় নিজের কাছে এনে রেখেছেন।

ছোট বউয়ের কাণ্ড দেখে হাজী সাহেবের আত্মা উড়ে গেলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হল। তিনি ভাবছেন, তার মানে ছোট বউ শোফার ভেতরে লুকানো টাকার সন্ধান পেয়ে গেছে। সেই টাকা দিয়েই মনের আনন্দে কেনাকাটা করে বাসা ভরে ফেলেছে। তার মাথা ঘুরতে শুরু করলো।

স্বামীর এমন অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন না হয়ে মুচকি হাসি দিয়ে ছোট বউ বলে – ডরাইয়েন না। লোণে কিনছি। মাসে মাসে কিস্তিতে শোধ দিলেই হবে।

কথাগুলি হাজী সাহেবের কানে গেলো। শুনে মনে হল, কেউ যেন তার বুকের ভিতর ধারালো চুরি দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো। গলগল করে রক্তের ধারা ছুটছে। রক্তের গরম তাপে তিনি পুড়ে যাচ্ছেন।

তবুও কোনমতে জিজ্ঞেস করলো – লোণে কিনছ মানে কি ! এতোগুলি টাকা দিয়া কি করছ তুমি ?

– কিসের টাকা ?

– সোফার ভিতর লুকানো ছিল সেই টাকা।

এবার ছোট বউয়ের পয়লা অবাক হওয়া পরে চেহারা ফ্যাকাসে হওয়ার পালা। চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে – আপনি এসব কি বলেন বুঝি না। সোফার ভিতর কিসের টাকা ছিল ? কত টাকা ছিল ? আমাকে এসব জানান নাই কেন ? হায়, আল্লাহ এটা আমি কি করলাম !

হাজী সাহেব একটু ধাতস্থ হয়ে আস্তে আস্তে বলেন – বড় সোফাটার ডানদিকের গদির নীচে স্প্রিঙের সাথে বেঁধে রাখা একটা পোটলায় এক লাখ ছাব্বিশ হাজার ডলার রাখা ছিল।

টাকার অংক শুনে ছোট বউ জ্ঞান হারালো।

এদিকে হাজী সাহেব হটাৎ বুকের বাম পাশে চিনচিনে ধারালো ব্যথা অনুভব করলো। হাই কোলেস্টরালের রুগী বুঝেছে হার্ট এটাক হচ্ছে। মেয়ের দিকে তাকিয়ে শুধু বলতে পারল – ৯১১ এ কল দাও। তারপর আর কিছু মনে নাই।

ছোট বউয়ের জ্ঞান ফিরলো অল্পক্ষণ পরেই। কিন্তু হাজী সাহেব আর ফিরে এলেন না। টাকার শোকে ব্রেইন হেমোরেজ হয়ে বেচারা মরেই গেল।

স্বামীর মরার খবর শুনে তার বউ একবার কান্দে আবার হাসে। কান্দে স্বামীর শোকে। হাসে স্বামীর বোকামিতে এতোগুলি টাকা হারানোয়। কিন্তু টাকার কথাটা কাউকে বলতে পারছে না।

হাজী সাহেবের লাশ গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে জানাজার জন্য তৈরী করা হল। পরিবারের ইচ্ছায় তাকে এই দেশেই ইসলামিক গোরস্থানে দাফন করা হবে। বাবার লাশ শেষবারের মত দেখতে গেলো হাইস্কুল পড়ুয়া ছেলে ইউনুস। টেকনিক্যাল কাজের ওস্তাদ সে। তার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল। বড়দের কাছে শুনেছে মরার পর লাশ দাফন করে চলে আসার পর নাকি লাশকে জ্যান্ত করে ফেরেশতারা। তারপর তার ভাল মন্দের হিসাব নেয়া শুরু হয়। আল্লাহর কাছে হাজির করা হয়। সে এক এলাহি কাণ্ড। সব ধরনের অন্যায়ের জন্য আলাদা আলাদা শাস্তি হয়। তারপর আবার জেরা শুরু হয়। এই পুরো ব্যাপারটা সবাই শুধু শুনেছে। কেউ দেখে নাই।

ইউনুসের খুব ইচ্ছা হল, পুরো বিচার প্রক্রিয়াটা দেখার। তাই সে সবার অলক্ষ্যে কাফনের মুখ খুলে লাশের হাতে পায়ে মাথায় সামনে পেছনে বেশ কয়েকটা ইনফ্রা’রে সম্বলিত মিনি অয়ারলেস ইন্টারনেট সারভেইল্যান্স ক্যামেরা লাগিয়ে দিল। তারপর আবার লাশের কাফন বেঁধে দিয়ে সরে এলো।

কাঠের বাক্সে ভরে লাশ দাফনের কাজ শেষ করে সবাই বাসায় ফিরল। তার কিছুক্ষণ পর ইউনুস তার ল্যাপটপে গিয়ে ক্যামেরার গতিবিধি দেখতে মনিটর অন্য করলো।

সব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। তখনো লাশ ওরা যেভাবে রেখে এসেছে সেভাবে অনড় হয়ে পড়ে আছে। একটু পরে কি যেন নড়ে উঠলো। তাকিয়ে দেখে কবরের পায়ের দিকের মাটির দেয়াল সরে একটা সুড়ঙ্গের মুখ খুলে গেল। সে সুড়ঙ্গ থেকে শক্তিশালী দড়ির মত কিছু একটা এসে কাঠের বাক্সের ঢাকনা সরিয়ে পায়ে পেঁচিয়ে গেল। তারপর লাশটা হ্যাঁচকা টান মেরে সুড়ঙ্গের ভিতর ঢুকিয়ে নিয়ে ছুটতে শুরু করলো একেবেকে।

ওরা ছুটছে তো ছুটছে। একেঁবেঁকে ছুটছে। আরে এতো দেখি বিশাল সাইজের দুইটা অজগর। ওরা ইউনুসের বাবা হাজী সাহেবের দুই ঠ্যাং পেঁচিয়ে ধরে ছুটছে। আহারে তার বাবার মাথাটা নিশ্চয়ই পাথুরে মাটিতে ঘসা খেয়ে ছিলে যাচ্ছে।

বেচারা !

একটা বিশাল মাঠে এসে থামল ওরা। একি, বাবা দেখি উঠে দাঁড়িয়ে গেল। তবে তার চেহারা বদলে গেছে। তাকে দেখে আর বৃদ্ধ মনে হচ্ছে না। এ যেন এক যুবক দাঁড়িয়ে আছে। দুই পাশে নাক মুখ ডাকা কালো কাপড় পরা বিশালদেহী দুই দৈত্য দাঁড়িয়ে আছে। ওরা মনে হয় ফেরেশতা। যুবক হাজী সাহেবের সামনে বিশাল এক মঞ্চ। সেটা দেখতে পল্টনের বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ দেয়া মঞ্চের মতন। সেই মঞ্চে উঁচা একটা সিংহাসন বসানো। তাতে কেউ যেন বসে আছে। তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। পাশে ইয়া বড় সোনালী বাটিতে আঙ্গুর রাখা। সেই অদৃশ্য মুখের অবয়ব একটা দুইটা করে আঙ্গুর খাচ্ছে তুলে।

তার গলা গমগম করে বেজে উঠলো। যেন লাউড স্পিকার বাজলো। অথচ ইউনুস কোন মাইক দেখলো না কোথাও। কি বাজখাই গলারে বাবা। সেই গলায় হুকুম এলো – সওয়াল শুরু হোক ।

ফেরেশতাদের একজন বলল – হুজুর, এই আদম সন্তানের নাম জব্বার আলী। সে সময়ের আগে মানে আমরা তার জান ধরে টান দেয়ার আগে টাকার শোকে নিজেই মরেছে। সে চার বার হজ্ব করেছে। তার জন্য ফরজ ছিল মাত্র একবার। অথচ সে তার দুই বিবির একজনকেও হজ্ব করায় নাই।

গমগম গলা – অনেক বড় ভুল কাজ করেছে। পয়সার অপচয় হয়েছে। সেই টাকায় অন্যের উপকার করতে পারতো।

ফেরেশতা – শুধু কি সেটাই নাকি ! তিনি ম্যালা সম্পত্তির মালিক। কিন্তু জাকাত দেয় অতি সামান্য যা মোটেও যথেষ্ট না। এদের মত ফাঁকিবাজ মানুষের কারণে আমাদের ফান্ডে সর্ট চলছে।

গমগম গলা – আচ্ছা, এক কাজ কর। ওকে একবার আগুনের গোলায় ভেজে আনো।

ফেরেশতারা হাজী সাহেবের দুই হাত পা চেপে ধরে জোড়া করে বেঁধে একটা লম্বা বাঁশের ভিতর ঢুকিয়ে চ্যাংদোলা করে ঝুলিয়ে কাঁধে উঠিয়ে নিলো। তারপর হাঁটা শুরু করলো। একটু দুর যেতে আগুনের তাপ এসে চোখে মুখে লাগলো। কাছে যেতে ইউনুস দেখে বিশাল যায়গা জুড়ে গনগনে আগুন জ্বলছে। সেই আগুনে বাঁশে ঝুলানো অনেক আদম সন্তানকে ঝলসানো হচ্ছে।

হাজী সাহেবকে সেখানে রাখা খুঁটির সাথে ঝুলিয়ে দেয়া হল। পটপট আওয়াজ করে পুড়ছে। সাথে সাথে হাত পা বেঁকিয়ে যাচ্ছে। অথচ মুখে কোন আওয়াজ নাই।

ইউনুস ভাবল – আহারে, আল্লাহ মনে হয় আওয়াজ কেড়ে নিয়েছে।

আধা ঘণ্টা ধরে ঝলসানো শেষে হাজী সাহেবকে আবার কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির করা হল।

গমগম গলা আবার বেজে উঠলো – পরের কমপ্লেইন বল।

ফেরেশতা – হাজী সাহেব নামাজে দাঁড়িয়ে মনে মনে টাকার হিসাব কষতো। তারপর ভুলে যেত কয় রাকআত নামাজ পড়া হয়েছে।

এবার হাজি সাহেবের গলা শুনা গেল – হুজুর, আমি ইচ্ছা করে এমন করি নাই। আমার কর্মচারীগুলি সব চোর। তাই সারাক্ষণ হিসাব করতে হত। নইলে অনেক টাকা মার খেয়ে যাই।

– তো সেই টাকার ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছ। জাকাত ফাঁকি দিয়েছ । এত সাহস কে দিলো শুনি ?

– হুজুর, মোল্লারা বলেছে একবার করে হজ্ব করলে সে যাবত যত গুনাহ হয়, সব মাফ হয়ে যায়। তাই আমি চারবার করেছি। আরও অনেকবার করা ইচ্ছা ছিল।

– তাকিয়ে দেখ পাশে চৌবাচ্চায়। ওরা কারা ওখানে, জানো ? ওর সবাই হুজুর। যাদের উপর দায়িত্ব ছিল আমার হুকুমগুলি সহিভাবে বয়ান করার। তারা সব জেনেও সেই কাজটা করে নাই। তাই তাদের শাস্তি আজীবন চলবে।

হাজী সাহেব তাকিয়ে দেখে একটা বড় চৌবাচ্চার ভিতর অনেক কজন মানুষ। একজনকে খুব চেনা লাগলো। আরে, এতো তাদের মসজিদের সেই বিশাল বপু ওয়ালা মোটা গর্দানের ইমাম যিনি একবার রুকু সেজদায় গেলে সহজে সোজা হত না। সবাইকে খুব কষ্ট দিতো। আর মানুষকে হাইকোর্ট দেখিয়ে শুধু চাঁদা নিতো বেহেশতের চাবি দেবে বলে। খুব ভাল হয়েছে। এমন শাস্তি দরকার তার জন্য। অনেক মানুষকে ঠকিয়েছে সে।

গা শিউরে উঠলো দেখে। দেখে অনেকগুলি বিষাক্ত কেউটে সাপ অনবরত ছোবল মারছে চৌবাচ্চায় আটকে রাখা মানুষগুলির চোখে মুখে।

গমগম গলা – তারপরের অভিযোগ বল।

ফেরেশতা – হুজুর এই আদম ভাইবোনের হক আদায় করে নাই। বাপের সম্পত্তির সুসম বণ্টন করে নাই। আমানতের খেয়ানত করেছে। সে পাশের বাড়ির যায়গার উপর দেয়াল দিয়ে দিয়েছে।

– আর কি !

ফেরেশতা – হুজুর সে খুব নাক সিটকানো মানুষ। বাপের বদলী রোজা রাখা মুসাফিরকে মাটিতে বসিয়ে মাটির বাসনে ভাত খেতে দেয়। সন্মান দেখায় নাই। তার আরও বড় অপরাধ হল, সে তার প্রতিবেশী হিন্দু মানুষকে ‘মালুর বাচ্চা’ বলে গালি দেয়। তাকে কে বলেছে জিজ্ঞেস করুন, যে তার জাত ছাড়া আর কেউ আল্টিমেট পুরস্কার পাবে না !

গমগম গলা – শোন গুনাহগার। তোমার গুনাহ অনেক বড়। যেখানে বলা হয়েছে আমার সৃষ্টি একটা সামান্য কীটকে পর্যন্ত কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। দরকারে পাশ কাটিয়ে যাবে। সেখানে তুমি আমার সেরা সৃষ্টি মানুষকে অপমান করার সাহস কোথায় পেলে ? আমি কি পরিষ্কার করে উচ্চারণ করি নাই যা তোমার কানে পৌঁছায় নাই যে – তুমি তোমার কর্ম কর। ভাল কাজ কর। দুর্বলের পাশে দাঁড়াও। কাউকে তুমি অবজ্ঞা, অবহেলা করো না। করতে পারবে না। আমি পরিষ্কার করে উচ্চারণ করেছি – ভাল মন্দের বিচার শুধু আমি করবো। সিদ্ধান্ত আমি দেব। কোন বান্দা কোন সিদ্ধান্ত দেবে না। দেয়ার চেষ্টা করলে আমি খুব রাগান্বিত হই। আমার উপর টেক্কা দেয়ার পরিণাম বড় কঠিন। সেটা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাবে হে বাছাধন।

হুকুম করলো – যাও তাকে নিয়ে ট্যানারির পঁচা ড্রেনে চুবিয়ে রাখো কয়েক বছরের জন্য।

আবার তাকে চ্যাংদোলা করে ঝুলিয়ে কাঁধে উঠালো ফেরেশতারা। যেতে যেতে হাজী সাহেব তাকিয়ে দেখে একটা যায়গায় অনেক মানুষ শুয়ে বসে আছে। গল্প গুজবে মেতে আছে।

হাজী সাহেব জিজ্ঞেস করে – ফেরেশতা ভাই, ওরা কারা ?

উত্তর আসে – ওটা নো মেনস ল্যান্ড। শুধু বড় গুনাহগারদের বিচার আগে হয়। ওরা গুনাহ করে নাই। নামাজ রোজা না করলেও কারো ক্ষতি করে নাই। মানুষের টুকটাক উপকার করেছে। সবাইকে এক নজরে দেখেছে। তাই ওদের ফাইল পেন্ডিং আছে আপাতত।

হাজী সাহেব ভাবল – ইস, ঐখানে যায়গা পেলেও বাঁচতাম। ক্যান যে ট্যাক্স দিতাম না। সেই কারণে এতগুলি টাকা এমনেই হারায়ে গেল। আবার সেই টাকার জাকাত না দেয়ায় এখন এখানেও ড্রেনে ঢুকতে হবে।

দুর্গন্ধময় পঁচা গলা থকথকে কাদার একটা ড্রেনে এনে হাত পা অবস্থায় নামিয়ে দেয়া হল হাজী সাহেবকে। সাথে সাথে টের পেলো – ছোট ছোট কি সব প্রাণী তাকে ঠোকর দিতে শুরু করেছে। কাদা লেগে জ্বলুনি শুরু হলে বুঝলো এগুলি পিরানহা মাছ। সারছে কাম। এগুলি তো ভয়ঙ্কর মাছ সে জানে। ভুল করে একবার পুকুরে ফেলার পর অল্পদিনে সব মাছের পোনা খেয়ে পুকুর উজাড় করে ফেলেছিল। হাত পা বেঁধে রাখায় বাধা দিতে পারছে না। সারা শরীর জ্বলছে। এর ভিতর টের পেলো কেউ একজন একটা ঘাই মেরে গেলো। এটা মনে হয় আফ্রিকান মাগুর।

ও খোদা, এমুন শাস্তি ক্যান দিতাছ আমারে ! এবার যা টের পেলো তার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। কিছু একটা তার মহা মূল্যবান সম্পদের উপর হামলা করা শুরু করেছে। সমজাতীয় ভেবে তার পুরুষাঙ্গে মাথা দিয়ে ধাক্কা মারছে। আহারে, সে কোন ডিফেন্স নিতে পারতেছে না। এই সম্পদ না থাকলে তার আর থাকবে কি ?

ইউনুস এতক্ষণ বসে বসে ল্যাপটপের মনিটরে তার বাপের কবর আজাব দেখছিল। চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় হটাৎ ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে গেল। বাকিটুক কাল দেখবে ভেবে সে ঘুমিয়ে গেল।

বাস্তবে হাজী সাহেব বাসায় নতুন সোফা দেখে জ্ঞান হারালে তাকে হাসপাতালে নেয়া হল। সিভিয়ার হার্ট এটাক করেছে তার। সাথে সাথে তার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হল। এত সবকিছু করা হয়েছে তাকে ঘুমের ভিতর রেখেই। চারদিন পর জ্ঞান ফিরে এলে তিনি দেখে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে চারিদিকে অনেক নল লাগানো অবস্থায়। ছোট বউ পাশের সোফাটায় মাথা গুঁজে শুয়ে আছে। আর ছেলেটা আরেকটা চেয়ারে বসে ফোন টেপাটেপি করছে।

যাক বাবা, সে তাইলে মরে নাই। এতক্ষণ যা কিছু তার সাথে হয়েছে সবই তিনি খোয়াব দেখেছে মাত্র। কিছুই সত্যি না।

বাঁচা গেল। তবে বুঝে ফেলেছে, আল্লাহ তাকে বিপদ সংকেত দেখিয়ে দিয়েছে। তাকে বদলাতে হবে। অনেক বদলাতে হবে। নইলে তার ইবাদত কোন কাজে আসবে না।